দেশের ৩১তম সেনানিবাস হতে চলেছে বরিশালে। দেড় হাজারের বেশি একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া সেনানিবাসটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে।
এটি তৈরিতে ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই অর্থের জোগান দেওয়া হবে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে সেনানিবাসের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে সেনা সদর ও পূর্ত পরিদপ্তর। ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস বরিশাল স্থাপন’ শিরোনামের প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান লুত্ফর রহমান তরফদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সেনানিবাস স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলায় বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে ২০০ কিলোমিটার দূরের যশোর সেনানিবাসের সহায়তা নিতে হয়। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে সরকারের বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। দুর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি সেসব প্রকল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরিশালে একটি সেনানিবাস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ’
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেনানিবাসটি মূলত বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যে পড়ছে।
এ দুই জেলার পায়রা নদীসংলগ্ন এলাকায় লেবুখালীতে আধুনিক মানের সেনানিবাসটি গড়ে তোলা হবে। বরিশালের পাশাপাশি পটুয়াখালীর বাকেরগঞ্জ, দুমকী ও মির্জাগঞ্জ উপজেলায়ও প্রকল্প এলাকা পড়েছে।
প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯টি ডিভিশনের আওতায় দেশে এখন ৩০টি সেনানিবাস রয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ উপকূলীয় এলাকা বরিশাল ও পটুয়াখালীতে সেনানিবাস নেই। জাতীয় নিরাপত্তা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় দক্ষিণে একটি সেনানিবাস গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এর মাধ্যমে সরকার ঘোষিত ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আওতায় আন্তর্জাতিক মানের সেনাবাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে বলা হয়েছে, সেনানিবাসটি গড়ে উঠবে এক হাজার ৫৩২ একর জমির ওপর। এর মধ্যে ৫৬৭ একর জমি রাজস্ব বাজেটের আওতায় কেনা হয়েছে। অবশিষ্ট ৯৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্প এলাকাটি চরাঞ্চল হওয়ায় সেখানে জনবসতি গড়ে ওঠেনি। ফলে ঘরবাড়ি কিংবা স্থাপনার জন্য কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের প্রয়োজন পড়বে না। প্রস্তাবিত সেনানিবাসে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে প্রায় ১৭ হাজার। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে এক হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্প এলাকায় আটটি অফিস ভবন, ১২টি আবাসিক ভবন ছাড়াও ৯টি ছোট-বড় ভবন নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের আরেক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে সরকার এখন পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে পায়রায়। সেখানে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজও চলছে। একই সঙ্গে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে সরকারের নেওয়া এসব মেগা প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনানিবাসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলা বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ভোলা উপকূলবর্তী জনপদ। এই সেনানিবাসের কাজ শেষ হলে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা সহজ হবে।