প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে যারাই কিনা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের সবাইকে স্বদেশে ফিরে যেতেই হবে। এমনকি মিয়ানমারকে ফিরিয়ে নিতেই হবে এসব রোহিঙ্গাদের।
‘
ড. গওহর রিজভী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। বিশ্ব সম্প্রদায় সেভাবে কাজ করছেন। আমরাও কূটনৈতিকভাবে সেভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে তা সময়ের ব্যাপার। রাতারাতি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব না। তাই যতদিন রোহিঙ্গারা থাকবে ততদিন মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় ড. গওহর রিজভী রোহিঙ্গা কর্মকাণ্ডে জড়িত স্থানীয়দের দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ দিয়ে আরো বলেন, তবে রোহিঙ্গারা স্বদেশমুখী হওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, যতই বলা হোক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিয়ে অন্য কোন পথ মিয়ানমারের খোলা নেই। এখানে আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা কতদিন করা সম্ভব বলেন তিনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনুষ্ঠিত এ সভায় রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক কমিশন (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিভাসন সংস্থা (আইওএম) সহ দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর উপদষ্টো ড. গওহর রিজভী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরনার্থী সমস্যার কথা উলস্নেখ করে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অনেক দেশের শরণার্থী শিবির নিজ চোখে দেখার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারে মাত্র দুই মাস বয়সের রোহিঙ্গা শিবির দেখে সত্যিই আমি অভিভুত হয়েছি। এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এরকম স্বল্প পরিসরে বলতে হয় চমত্কার পরিবেশে রয়েছে রোহিঙ্গারা। ‘
এ রকম দ্রুত সময়ের মধ্যে ৬ লক্ষাধিক মানুষের স্থান সংকুলান করার কাজটিকে একদম খাট করে দেখার কোনোই সুযোগ নেই-বলেন ড. গওহর রিজভী। এ জন্য তিনি রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত প্রশাসন, দাতা সংস্থা, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ নানা শ্রেণী-পেশার দানশীল ব্যক্তিদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে রোহিঙ্গা শিবিরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর। সব সময় কিছু ‘বদমায়েশ’ শ্রেণির মানুষ শরণার্থী শিবির কেন্দ্রীক বাজে কাজ করার সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। এ রকম কোনো বাজে কাজের সুযোগ কাউকেই করতে দেয়া যাবে না। তিনি রোহিঙ্গা শিবিরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি অনসুরণের পরামর্শ দেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের।
সভায় কক্সবাজারে কর্মরত রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অফিসের যুগ্ম সচিব আবুল কালাম আজাদ তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের স্থান সংকুলানের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘এভাবে আরো রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকলে সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফের কোনো গাছ-গাছালি আর থাকবে না। সেই সঙ্গে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বন্য পশুর একটি অভয়ারণ্যও নিঃশেষ হয়ে যাবে। ‘
এ প্রসঙ্গে সরকারের যুগ্ম সচিব প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আরো কত রোহিঙ্গার বোঝা আমাদের বহন করতে হবে কি জানি। এরকম অবস্থায় রোহিঙ্গা শিবির তিন হাজার একরের চেয়েও বেশি সম্প্রসারণ করা দরকার। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, বর্তমান রোহিঙ্গা শিবিরকে যদি পশ্চিমের দিকে সম্প্রসারণ করতে হয় তাহলে বন বিভাগের বন্য পশুর অভয়ারণ্য শেষ হয়ে যাবে।
আবার বিকল্প খুঁজে বের করাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। যুগ্ম সচিব তাই সরকারের কাছে জানতে চান-আরো কত লাখ রোহিঙ্গার বোঝা আমাদের নিতে হবে? তার প্রতিউত্তরে উপদেষ্টা বলেন, যেখানে মিয়ানমার এখনো পর্যন্ত স্বীকারই করেনি তাদের দেশের রোহিঙ্গাদের এপারে আসার কথা সেখানে সুনির্দিষ্ট এরকম জবাবও অসম্ভব। তাই মিয়ানমারের সঙ্গে আসন্ন চুক্তি পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলাও যাচ্ছে না।
সভায় জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন রোহিঙ্গা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এ ছাড়াও সভায় কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুলসহ কয়েকন এনজিও কর্মকর্তা বক্তব্য রাখেন। সভায় শেখ পরিবারের সন্তান শেখ রেহানার পুত্র ববি সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী আইওএম কান্ট্রি প্রধান পেপি সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন।