গত ৪০ দিনে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ১৪ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই মারা গেছে নিউমোনিয়া ও জন্মগত শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে। এ ছাড়া জন্ডিস এবং রক্তের সংক্রমণেও শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশই শিশু হলেও নেই কোনো শিশুবিশেষজ্ঞ।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, শিশুরোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসক নেই এটা ঠিক, কিন্তু চিকিৎসায় কোনো হেরফের হচ্ছে না। তিনি নিজেও শিশুরোগ চিকিৎসার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তা ছাড়া অন্য চিকিৎসকেরাও শিশুর চিকিৎসা দিতে পারেন।
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ১ হাজার ২০০ রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ রোগীই শিশু। ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে মারা গেছে ১৪ জন। যাদের মধ্যে ৬ জন নিউমোনিয়া, ৪ জন জন্মগত শ্বাসকষ্ট, ১ জন জন্ডিস, ১ জন অপুষ্টিজনিত রোগ, ১ জন রক্ত সংক্রমণ আর ১ জন অকাল জন্মের (প্রিম্যাচিওর) কারণে মারা গেছে।
মারা যাওয়া শিশুরা হলো, ইভানা (৩ বছর), ওবায়েদ উল্লাহ (৬ মাস), জাহেদা বেগমের নবজাতক (৩ দিন), আল আমিন (৯ দিন), রিনা আক্তারের নবজাতক (৭ দিন), পান্না বেগমের নবজাতক (১৩ দিন), মোহাম্মদ (১০ দিন), সীমা আক্তারের নবজাতক (৬ দিন), লাভলি আক্তারের নবজাতক (১ দিন), পারভীন আক্তারের নবজাতক (১ দিন), মো. সজীব (৫ মাস), মো. বাবু (১ দিন), মিনারা বেগমের অকালে জন্ম নেওয়া শিশু ও সীমা বেগমের নবজাতক (১২ দিন)।
হাসপাতালে মারা যাওয়া জাহাজমারা এলাকার ওবায়েদ উল্লাহর বাবা মো. পারভেজ বলেন, গত সপ্তাহে হঠাৎ তাঁর ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রথম কয়েক দিন তাঁরা স্থানীয়ভাবে পল্লিচিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা করান। পরে অবস্থা খারাপ দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে দুই দিন পর ছেলে মারা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, অভিভাবকেরা সচেতন না হওয়ায় বেশির ভাগ শিশুরই অবস্থা যখন খারাপের দিকে চলে যায়, তখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন চিকিৎসা দিয়েও যথাযথ ফল পাওয়া যায় না। ফলে শিশুর মৃত্যু ঘটে। তবে চিকিৎসা না পেয়ে কোনো শিশু হাসপাতালে মারা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন বিধানচন্দ্র সেনগুপ্ত গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এক আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণে তিনি জেলার বাইরে রয়েছেন। ফিরে এসে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন।