এ ঘটনার পরপরই সাংসদের নির্ধারিত অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
বেদে পরিবারের ২১ জন সদস্যের হাতে সরকারি অনুদান তুলে দেওয়ার জন্য আজ বিকেলে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার তিতারকোনা বেদেপল্লিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আয়োজক ছিল উপজেলা সমাজসেবা অফিস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। কিন্তু তাঁকে অতিথি করার কারণে অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে বাধা দেন বাহুবল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাঁরা মিয়া। তিনি ও তাঁর লোকজন সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বেদেপল্লির লোকজনকে ডেকে নিয়ে নিষেধ করেন অনুষ্ঠান না করার জন্য। বাধা পেয়ে সমাজসেবা কার্যালয় নির্বারিত স্থানে অনুষ্ঠান না করে একই উপজেলার মিরপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের সময় কেয়া চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুসরাত এলাহী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহুবল থানার একদল পুলিশ।
কেয়া চৌধুরী বেদেপল্লির কাছে যাওয়ামাত্রই বাহুবল উপজেলা ভাইস মো. তারা মিয়া এবং হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলাউর রহমান শাহেদের নেতৃত্বে একদল লোক বাধা দেন কেয়া চৌধুরীকে প্রবেশে। একপর্যায়ে তাঁরা সাংসদ কেয়া চৌধুরীকে ধাক্কা দেন। এ সময় মাটিতে পড়ে আহত হন কেয়া চৌধুরী। এ সময় অন্য লোকজন তাঁকে এ হামলা থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
বাহুবল সমাজসেবা কর্মকর্তা নুসরাত এলাহী বলেন, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার তিতারকোনা বেদেপল্লির লোকজনের সহায়তার জন্য কেয়া চৌধুরী সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। তাঁর এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজসেবা মন্ত্রণালয় এ বেদেপল্লির ২১ সদস্যকে পাঁচ হাজার টাকা করে বিশেষ অনুদান বরাদ্দ দেয়। এ অনুদানের চেক হস্তান্তর করতেই তাঁরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।
অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারা মিয়া বলেন, ৪ নভেম্বর বাহুবল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন ছিল। এ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। তাঁর নির্বাচনের সময় কেয়া চৌধুরী বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আজ যে অনুষ্ঠান করা হয়, তাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দাওয়াত করা হয়নি। যে কারণে ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা এর প্রতিবাদ করেন, তবে কেউ তাঁর ওপর হামলা করেনি।
সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, বেদেপল্লিতে যাওয়ামাত্রই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একদল লোক তাঁর ওপর এ আক্রমণ করেন। এর পেছনে আরও অনেকের ইন্ধন আছে। এর আগেও তারাই পল্লির লোকজন ও বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নিষেধ করেন সরকারি এ কর্মসূচি এখানে না করতে। এমনকি বেদে পরিবারগুলোকে ভয়ভীতি দেখান তিনি। আহত অবস্থায় কেয়া চৌধুরীকে বাহুবল হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাতে সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।