এ কে এম রিপন আনসারী : গাজীপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংশ্লেষে কালোত্তীর্ণ মহিমায় আর বর্ণিল দীপ্তিতে ভাস্বর অপার সম্ভাবনায় ভরপুর গাজীপুর জেলা । মোগল – বৃটিশ – পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গাজীপুরের রয়েছে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্বে গাজীপুরেই সংঘটিত হয় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। গাজীপুরে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরসহ ১৯টি কেপি আই, ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের একমাত্র হাইটেক পার্কসহ বহু সংখ্যক সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষুদ্র/মাঝারী ও ভারী শিল্প কারখানাসহ দেশের তৈরী পোষাক শিল্পের বিরাট অংশ। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা টংগীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়।
ইতিহাস খ্যাত ভাওয়াল পরগণার গহীনবনাঞ্চল আর গৈরিক মৃত্তিকাকোষের টেকটিলায় দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক এ জনপদ ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ গাজীপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮৩ সালে মহুকমা থাকা অবস্থায় গাজীপুর জেলার জন্ম। এরপর থেকে গাজীপুর জেলায় সাংবাদিক সমাজের প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কাজ শুরু হয়। হাঁড়ির সঙ্গে হাঁড়ির সংঘর্ষ প্রথারমতই শুরু থেকেই কিছু কিছু করে কোন্দল ছিল সাংবাদিক সমাজে, যা সকল জায়গাই আছে। শুরুতে গাজীপুর প্রেসক্লাবের ব্যবহৃত ভবন গাজীপুর রাজবাড়ির ভেতরে মাধব ঠাকুরের রান্না ঘর। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত গাজীপুর প্রেসক্লাবে প্রকাশ্যে তেমন কোন বিরোধ ছিল না, যে সাংবাদিকেরা আলাদা হয়ে যাবেন।
২০০৩ সালে গাজীপুর প্রেসক্লাবে প্রথম নির্বাচন হয় প্রত্যক্ষভোটে। গাজীপুর প্রেসক্লাবের ওই নির্বাচনে সভাপতি হয়েছিলেন নাসির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমেদ সরকার ও সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলাম আমি এ কে এম রিপন আনসারী।
২০০৭ সাল পর্যন্ত সকলেই ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্তও কোন সমস্যা ছিল না। ২০০৯ সালে নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে ১৯ জন সদস্যকে বহিস্কার করা হয়। কাউকে না জানিয়ে করা ওই বহিস্কার নিয়ে শুরু হয় দ্বন্ধ। ওই দ্বন্ধ আজো চলমান। এই সময় ২৯ দিন ছিল গাজীপুর প্রেসক্লাবে তালা। আমি ও সহকর্মী জাহিদ বকুল প্রেসক্লাবে তালা মেরে সামনে বসে ছিলাম ২৯ দিন। এরই মধ্যে ২০০৯ সালে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায়ের আলোকে তৎকালিন জেলা প্রশাসক আমাদেরকে প্রেসক্লাব ছেড়ে দিতে বলেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মাধব মন্দির খালি করে দিতে আদালতের রায় ও প্রধানমন্ত্রীর চিঠির প্রতি সম্মান রেখে ভবন খালি করি আমরা। ২৩ জন সাংবাদিক জয়দেবপুর থানায় উপস্থিত হয়ে জিডি করি। তারপর আদালতে এফিডেবিট করে গাজীপুর শহরের হাবিবুল্লাহ সরণীতে চলে আসি। ওই দিকে কতিপয় সহকর্মী তালা ভেঙে আবার মন্দিরে প্রবেশ করে প্রেসক্লাবের কার্যক্রম শুরু করে। ফলে একই নামে দুটি প্রেসক্লাবের কার্যক্রম চলতে থাকে। যা এখনো বর্তমান।
এদিকে এক নামে দুটি প্রেসক্লাবের দুটি কমিটির আভ্যন্তরীন কোন্দলে সুবিধা নেয় সুবিধাবাদী চক্র। বিশেষ করে প্রশাসন এই সুবিধাভোগ করে বেশী। ফলে সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানী বেড়ে যায়। সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ না থাকায় সহজেই সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানী হয়। শুধু তাই নয়, গাজীপুরের একাধিক দৈনিকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। আসামী হয় সম্পাদক ও রিপোর্টাররা। পালিয়ে থাকেন ও গ্রেফতার হন খোদ সম্পাদকও।
সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানীর মধ্যে আছে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা। এক এসপির বিরুদ্ধে সংবাদ দিয়ে বেশ কিছু দিন পালিয়ে থাকতে হয়েছিল একজন সিনিয়র সাংবাদিককে। পেশাগত কাজে গিয়ে মারধর ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য। মামলা মোকাদ্দমা ও হয়রানী নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে গাজীপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের। একমাত্র সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে ওই সকল হয়রানী বলে মনে করছেন অনেকে।
অনুসন্ধান সূত্র বলছে, কিছু সংখ্যক সাংবাদিক দলবাজী করে আভ্যন্তরীন কোন্দল আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক কারণেই শুধু নয় সব সময় সরকারি দলের হয়ে প্রশাসনের দালালী করতে গিয়ে প্রতিবাদী সাংবাদিকদের বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানী করেছেন খোদ দালাল সাংবাদিকেরাই। ফলে প্রশাসনের প্রবল চাপে পরে গাজীপুরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ৩জন টিভি সাংবাদিক রক্তাক্ত জখম হলেও কোন প্রতিবাদ হয়নি। প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরুর আগে দালাল সাংবাদিকদের কারণে তা পন্ডও হয়ে যায়। ফলে সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানী হলে আর প্রতিবাদ হয় না। কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত করে না। তাই এখন অহঃরহই ঘটছে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা। বর্তমানেও জেলে রয়েছেন সাংবাদিক।
সাধারণ সাংবাদিক ও সমাজসেবকেরা মনে করেন, গাজীপুরে সকল সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী। না হয়, যে কোন সময়, যে কেউ নির্যাতনের শিকার হতে পারেন।