বৈধ উপায়ে একজন গ্রাহকের পাসপোর্ট করতে সরকার-নির্ধারিত খরচ ৩ হাজার ৪৫০ টাকা। অথচ দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে একজন গ্রাহকের মোট ব্যয় হচ্ছে আট হাজার টাকার কাছাকাছি।
সম্প্রতি অনুসন্ধান ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতির কিছু চিত্র উঠে এসেছে। এর সঙ্গে কেবল পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তা ও দালাল জড়িত নন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর (পুলিশ, এসবি, র্যাব) কিছু সদস্য, কিছু আনসার সদস্য, এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, শেরেবাংলা নগর থানাসহ বিভিন্ন পক্ষও এর সঙ্গে জড়িত।
ফেসবুক পেজের পক্ষ থেকে এ সমস্যার প্রতিকার কী হতে পারে, তা জানতে চেয়ে আমরা পাঠকদের মতামত দিতে বলেছিলাম। অসংখ্য পাঠক সেখানে মন্তব্য করেছেন। অনেকেই তাঁদের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন।
নাইম আহমেদ লিখেছেন, ‘বৈধ উপায়ে পাসপোর্ট করতে একজন গ্রাহককে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই মানুষ বাধ্য হয়েই দালালের কাছে যায়। যদি আরও সহজভাবে পাওয়া যায়, তাহলে মানুষ আর দালালের কাছে যাবে না।’
সবুজ মুহুরি লিখেছেন, ‘আপনারা অনেক কষ্ট করে সত্যটা তুলে ধরেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সমাধান মনে হয় সম্ভব না, কারণ ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই যেখানে ভক্ষক, সেখানে কীভাবে কী হবে!’
মো. সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ভাই, বৈধ উপায়ে পাসপোর্ট করতে গেলে অনেক বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়। আমি নিজে যখন পাসপোর্ট করেছিলাম, তখন বৈধভাবেই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা পারিনি। কারণ, ওইভাবে করতে গেলে পাসপোর্ট অফিস নানা প্রকার ঝামেলা দেখায়। তাই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অফিসের কর্মকর্তাদের কিছু টাকা দিয়ে তারপর তাড়াতাড়ি করিয়েছিলাম। তা ছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশনে প্রায় ৭০০ টাকার মতো দিতে হয়েছে।’
পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং এর পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
সালাহউদ্দিন সোহাগ লিখেছেন, ‘পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন সিস্টেমটা বাদ দিতে হবে। অথবা এই ভেরিফিকেশনের জন্য এমন এক পদ্ধতি চালু করতে হবে, যেখানে পুলিশের কোনো স্থান থাকবে না। কারণ, এটা যে কতটা ঝামেলা, তা আমার এখনো মনে আছে। আবার পুলিশ ভেরিফিকেশন করলেই যে তা একেবারেই স্বচ্ছ হবে, তা কিন্তু নয়। কারণ, পাসপোর্ট অফিসে একদল লোক আছে, যারা দালালের মাধ্যমে ভেরিফিকেশনের জন্য একসঙ্গে অনেকগুলো পাসপোর্টের টাকা জমা নেয়। আর বলা হয়, পুলিশ আপনার বাড়ি যাবে না।’
আলীম ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যাপারটা বাদ দেওয়া দরকার। কারণ, এতে পুলিশের টাকা উপার্জনের আরেকটা খাত তৈরি হয়েছে। বাস্তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন বলতে তো কিছু দেখি না!’
এ দুর্নীতি কমাতে গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট না করিয়ে নিজেই যাওয়া উচিত মনে করছেন তাঁরা। তবে বেশির ভাগ পাঠক বলছেন ভিন্ন কথা।
ইশান ইসলাম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে এটা সম্ভব নয়। কেননা, এই ঘুষের ভাগ অনেক ওপর মহল পর্যন্ত যায়। আমি একই পাসপোর্ট পাঁচবার জমা দিয়েছি, কিন্তু সেটা গ্রহণ করা হয়নি। প্রতিবারই কেটে দেওয়া হয়েছে এবং শেষবার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। অনেকেই বলবেন, আমি পুলিশের সাহায্য নিতে পারতাম। কিন্তু এই ঘুষের টাকার একটা বড় ভাগ পুলিশ এবং স্থানীয় নেতাদের পকেটে যায়।’
মো. আনওয়ারুল করিম মিজান লিখেছেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা ও ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ যদি হয়রানি করা বন্ধ না করেন, মানুষ তাহলে দালালের আশ্রয় নেবেই। দোষ দালালদের চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেক বেশি। আর প্রক্রিয়াটি নামেমাত্র ডিজিটাল, কাজে ধারেকাছেও নেই।’
মেহেক আহসান রাসিদ লিখেছেন, ‘দালালেরা পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদেরই এজেন্ট। বৈধ উপায়ে যারা পাসপোর্ট করতে উদ্যত হয়, কাগজপত্রে অনেক ভুলত্রুটি বের করে তাদের অফিস থেকে বিভিন্ন হয়রানি করা হয়। ফলে গ্রাহক বাধ্য হয়ে দালালের মাধ্যমে ঝামেলাহীনভাবে পাসপোর্ট বানিয়ে নেয়।’
অনলাইন সেবাকে আরও বিস্তৃত করা উচিত বলে মনে করছেন কয়েকজন পাঠক। আরিফ আহদের সাগর লিখেছেন, ‘আমার মতে, পাসপোর্টের সব কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক হোক। ব্যাংকে টাকা জমা এবং অনলাইনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের স্ক্যান কপি জমা দেওয়ার মাধ্যমে আবেদনের নিয়ম করা হোক। নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহককে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে জানানোর পর আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।’
হারুন লিখেছেন, ‘অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের কার্যকারিতা বাড়ানো হোক এবং গণমাধ্যমে পাসপোর্ট পেতে করণীয় সব বিষয় যথাযথভাবে প্রচার করা হোক। তাতে দালালের দৌরাত্ম্য কমতে পারে, আর সরকার শিগগিরই ই-পাসপোর্ট চালু করার ব্যবস্থা করতে পারে। তাতে জালিয়াতিও কমবে।’
গণমাধ্যমকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। এম নাজিউর রহমান লিখেছেন, ‘মিডিয়া এ ব্যাপারে কিছু করতে পারে। আমি মনে করি, সব সরকারি বা দেশের কার্যক্রম করতে মিডিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন।’