সম্পাদকীয়: পরমন্ত্র, ষড়যন্ত্র ,স্বরমন্ত্র, ও আমাদের গনতন্ত্র

Slider ঢাকা ফুলজান বিবির বাংলা সম্পাদকীয় সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

23414497_10211874695957562_525970049_n

 

 

 

 

 

বাঙালী জাতি মুক্তিকামী। এই জাতি সব সময় মুক্তি চায়। বদ্ধ ঘরে থাকতে চায় না বাঙালী জাতি। আমরা জানি, আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন, দু:খু মিয়া।

কাণ্ডারী হুশিয়ার! কবিতায় তিনি বলেছেন

দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!
বিদ্রোহী ও  জাতীয় কবি তার সৃষ্টিতে নিজের বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন অসংখ্য বার। প্রেম, বিরহ, দেশপ্রেম সবিই ছিল তার। তাই তার লেখা থেকে আমরা সব বিষয়ে ধারণা পাই।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা।  একটি সোনার দেশ। আমাদের মাতৃভূমি। নাম বাংলাদেশ। বিশ্বের মধ্যে যুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে আমাদের বীর বাঙালী  ৯ মাসে রক্ত আর ইজ্জ্বত কোরবানী দিয়ে স্বাধীন করেছেন আজকের বাংলাদেশ। আমরা গর্বিত আমাদের দেশ নিয়ে। বাংলাদেশে আমাদের মাতৃভূমি, আমাদের মা। আমরা মাতৃভূমিকে লাল সালাম জানাই সব সময়।
দেশ স্বাধীনের পর বার বার আমাদের গনতন্ত্র আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের স্থপতিকে স্বপরিবারে খুন করে বিশ্বের ইতিহাস ভঙ্গ করা হয়েছে। তার পর আরেকজন রাষ্ট্রপতিকে খুন করা হয়েছে, যার লাশের বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন ঝুলছে। আবার একটি অদ্ভূত সরকার,  বাংলাদেশের স্থপতি ও   প্রয়াত  রাষ্ট্রপতির মেয়ে ও আরেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রীকে( দুই জনই প্রধানমন্ত্রীর পদবী প্রাপ্ত) জেলে পাঠিয়েছেন, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। সুতরাং আমরা কেমন জাতি যে, দুই জন রাষ্ট্রপতিকে পদে থাকা অবস্থায়  খুন করে ফেলেছি! আবার দুইজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এক যুগে জেলে দিয়ে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি! আসলেই আমরা হতভাগা জাতি।
অসংখ্যবার আমাদের সংবিধান স্থগিত হয়েছে। গনতন্ত্রকে প্রগতিশীল করতে গিয়ে আমরা বার বার বাংলাদেশের ইতিহাসকে কাটা ছিঁড়া করেছি নিজেদের মত করে। সংবিধানকে বার বার (১৬তম) সংশোধন করেছি। কিন্তু আমাদের গনতন্ত্রকে সংশোধন করতে পারিনি। এর অর্থ হল, আমরা দেশের চেয়ে ক্ষমতাকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য নিজেদের  মত করে সংবিধান সংশোধন করছি। মুলত: দেশ ও জনগনের জন্য সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন হলেও আমরা তা করছি না। যা করছি নিজেদের ক্ষমতা রাখার বা আসার জন্য। এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষনে বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,  এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। সংগ্রাম শেষ করে মুক্ত হতে গিয়ে খুন হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সুতরাং আমরা আসলে কি চাই, সংগ্রাম না মুক্তি! এ নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে।
বাংলাদেশের ক্ষমতার ইতিহাস বলে, অল্প সময়ই আমাদের বৈধ সরকার ছিল। মাঝে মাঝে সামরিক সরকার। আবার সামরিক শাষনের আড়ালে অদ্ভুত সরকার। আমাদের ক্ষমতার পালা বদলে বিদেশীদের হাত থাকে এটা চিরায়ত। রাষ্ট্রের মালিক জনগন। জনগন নির্ধারণ করবে কারা দেশ পরিচালনা করবে। কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বিদেশীরা নির্ধারণ করছেন কারা সরকার হবে।  তাই এখানে পর নির্ভর হয়ে যায়, আমাদের গনতন্ত্র। এটা আমাদের জন্য লজ্জ্বাস্কর।
ক্ষমতার ইতিহাস থেকে আমরা একটুও শিক্ষা নেই নি। ফলে আমরা কথায় কথায় সংগ্রাম আর সংঘর্ষের উস্কানী দেই। কিন্তু মুক্তির পথ উন্মমোচন করতে লজ্জ্বা পাই। ইগু সমস্যার কারণে আমরা পরস্পর পরস্পরকে সহ্যৃ করতে পারছি না। মিথ্যা কথা বলে ধরা পরলে “রাজনৈতিক বক্তব্য” বলে দায় এড়িয়ে যাই। রাজনীতি মিথ্যার অস্ত্র বলে আমরা চালিয়ে দিচ্ছি। এটা আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ সংকেত। কারণ কোন মৌলিক বিষয়কে ভেঙে চুরমার করে বিপরীতধর্মী করে ফেলার নাম রাজনীতি নয়। রাজনীতি শুধু দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য।
আমরা লক্ষ্য করলে দেখব, বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বলে দেয়, যাদের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করি, তাদের নিয়েই সরকার চালাই। এটা কোন রাজনীতি! ক্ষমতায় থাকলে অপরাধ নাই আর ক্ষমতার বাইরে গেলে অপরাধী এটা কেমন বিচার? এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। লক্ষ্য ও মনে রাখা উচিত, যতবারই আমরা নিজেরা সংঘাত করেছি ততবারই আমরা বিপদে পড়েছি। কোন সংঘাত বিপদ ছাড়া যায় না। তাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা উচিত। না হয়, অদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে এটাই স্বাভাবিক।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বলে দেয়, দলীয় সরকারের অধীন নির্বচান সুষ্ঠু হয় না। আবার অনির্বাচিত সরকারের অধীন কোন গনতান্ত্রিক নির্বাচন হওয়াও লজ্জ্বাজনক। সুতরাং যে কোন মূল্যে আমাদের আলাপ-আলোচনা করে একটি ভাল নির্বাচন করা উচিত। আর যদি এটা করা না হয়, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দল গুলো যেভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, তাতে আমরা বিপদের দিকে যাচ্ছি। অন্য দেশ আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে এই চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের মালিক জনগনের উপর বিশ্বাস রেখে নিশ্চিন্তে রাজনীতি করে সুষ্ঠু গনতন্ত্রের মাধ্যমে একটি সুন্দর ও গনতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  এই জন্য আমাদের সকলকে এক যুগে কাজ করা উচিত।
তাই পরমন্ত্র  নয়, ষড়যন্ত্র পরিহার করে  নিজেদের মন্ত্র(স্বরমন্ত্র) দিয়ে আমাদের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই রাষ্ট্র বিজ্ঞানের রাজনীতির সঠিক চর্চা হবে ও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এমনটিই আশা দেশবাসীর।
ড. এ কে  এম রিপন আনসারী
 এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *