‘গেটিং অ্যাওয়ে উইথ মার্ডার’ শিরোনামে সিপিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিচারহীনতার সূচক তৈরি করা হয়েছে সেপ্টেম্বর ১, ২০০৭ থেকে আগস্ট ৩১, ২০১৭ পর্যন্ত সাংবাদিক হত্যা ও হত্যা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার দৃষ্টান্ত নিয়ে। শুধু যে দেশগুলোয় পাঁচজন বা তার চেয়ে বেশিসংখ্যক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, সেই দেশগুলোকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সিপিজে বলেছে, তালিকায় থাকা সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজের জন্য খুন হয়েছেন। সংগঠনটির গবেষণায় দেখা গেছে, সাংবাদিক হত্যার দুই-তৃতীয়াংশই ঘটেছে তাঁদের পেশাগত কাজের কারণে। এ তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে পাকিস্তান। দেশটির অবস্থান সপ্তম। অন্যদিকে ভারতের অবস্থান ১২। গত বছরও বাংলাদেশের অবস্থান দশম ছিল।
সিপিজের হিসাবে, বাংলাদেশে গত এক দশকে সাতজন সাংবাদিক খুনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিপিজে আলোচনায় নিয়ে এসেছে মুক্তমনা ব্লগারদের প্রসঙ্গ। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে তাঁদের মৌলবাদী ও অপরাধী গোষ্ঠীগুলো খুঁজে বের করে হত্যা করেছে। নিহত ব্যক্তিরা ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ব্লগার এবং তাঁরা মাদক পাচারের ওপর প্রতিবেদন লিখেছেন। এসব খুনের মধ্যে কেবল ২০১৩ সালে আহমেদ রাজীব হায়দার নামের একজন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আদালত রায় ঘোষণা করেছেন। ২০১৫ সালে অভিজিৎ রায় খুনের পর বিভিন্ন ধরনের তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়া এবং বেশ কিছু গ্রেপ্তারের পরও কারও বিচার হয়নি।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি, তদন্তে ধীরগতি, তদন্ত না হওয়া উদ্বেগের। সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় বিচারে খুবই ধীরগতি দেখা যায়। এখন পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় যথাযথ বিচার হয়নি। সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত যথাযথ তদন্ত পর্যন্ত হয়নি। সেদিক থেকে বলা যায়, সিপিজের পর্যবেক্ষণ ঠিকই আছে।
সিপিজে প্রতিবছর ২ নভেম্বর ‘সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি বন্ধে’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিটি দেশের মোট জনসংখ্যা এবং ১০ বছরের ওপরে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা নিয়ে সূচক তৈরি হয়। এ বছরের সূচকে গত ১০ বছরের তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সূচকের প্রথম ১২টি দেশে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। খুন হওয়া সাংবাদিকদের এক-তৃতীয়াংশ মৌলবাদী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর শিকার। নিহত সাংবাদিকদের ৯৩ শতাংশই মফস্বল সাংবাদিক, তাঁরা প্রধানত অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে লিখতেন।
বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবি করে আসছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও ইউনিয়ন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেদনে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা সঠিক। সরকার সাধারণত যে ব্যাখ্যা দেয় তা হলো, বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের কোনো হাত থাকে না। তবে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা আতঙ্কের, হত্যার পর বিচার না হওয়াটা উদ্বেগের। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে রাষ্ট্রকে বের হয়ে আসতে হবে। না হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।