মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর লেখাপড়া এগোয়নি ইউসুফের। হতাশায় দিন কাটছিল তাঁর। চেষ্টা করেন মাশরুম চাষের। কিন্তু চাষ শুরু করে সাফল্যের মুখ দেখেননি । পরে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুরগির খামারের কাজ শুরু করেন। ৩৫ বয়সী এই যুবক এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। দক্ষিণ ঘোড়ামরা গ্রামে তাঁর এখন দুটি মুরগির খামার ও একটি মাশরুমের খামার আছে। মালিক হয়েছেন সাত গন্ডা জমির। বছরে মুরগির খামার ও মাশরুম বিক্রি করে তাঁর আয় হয় পাঁচ লাখ টাকা।
ইউছুফ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। বড় হয়েছেন সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘোড়ামরা গ্রামে ফুফু আনোয়ারা বেগমের বাড়িতে। সেখানেই গড়ে তুলেছেন খামার। তাঁর খামারে এখন কাজ করছেন ছয়জন শ্রমিক।
গত মঙ্গলবার ঘোড়ামরা গ্রামে নিজের খামারে বসে ইউসুফ তাঁর সাফল্যের গল্প শোনালেন। তিনি বলেন, জন্মের তিন বছরের মাথায় মা ছয়রা খাতুন চলে যান না ফেরার দেশে। দুই ভাইকে দেখাশোনা করা বাবার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। এসব দেখে ফুফু আনোয়ারা বেগম ইউসুফকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। ১৯৯৮ সালে কুমিরা আবাসিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন তিনি। এরপর আর লেখাপড়া এগোয়নি তাঁর। ২০০০ সালের শুরুতে একদিন তিনি জানতে পারেন মাশরুম চাষের কথা। রাঙামাটির আসাম বস্তিতে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণও নিলেন।
ইউসুফ বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে উৎসাহ নিয়ে মাশরুমের চাষ শুরু করেছিলেন। ফলন হয়েছিল ভালো। কিন্তু মাশরুম বিক্রি করতে পারছিলেন না। কোথায় বিক্রি হয় সেটা জানতেন না। ফলে এক বছরের মাথায় বন্ধ করে দেন মাশরুম চাষ। আবারও বেকার হয়ে যান তিনি। কেটে যায় আরও চার বছর।
২০০৫ সালে চট্টগ্রাম নগরের হাজিক্যাম্প এলাকায় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয় থেকে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা ঋণ পান। ১ হাজার মুরগির বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন মুরগির খামার। আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বাড়তে বাড়তে এখন তাঁর খামার হয়েছে দুটি।
ইউসুফ আরও বলেন, মাশরুম চাষের নেশা তাঁকে ছাড়েনি। ২০১০ সালে হাটহাজারী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে আবারও তিন দিনের মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। খামারের লাভের টাকা দিয়ে মাশরুমের চাষ শুরু করেন আবারও। উৎপাদিত মাশরুম বিক্রিও হতে লাগল এবার।
ইউসুফ তাঁর মাশরুম খামারে বছরের দুই ধাপে ৫ হাজার প্যাকেট মাশরুম চাষ করেন। মাশরুম আর মুরগির খামারের পাশাপাশি টার্কির চাষও শুরু করেছেন। প্রতি বছর মুরগির ও মাশরুমের খামার থেকে তাঁর আয় হয় পাঁচ লাখ টাকা।
২০১১ সালে ইউসুফ বিয়ে করেছেন। এখন এক কন্যাসন্তানের জনক তিনি। তাঁর স্ত্রীও এই কাজে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন।
ইউসুফের সাফল্য সম্পর্কে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, তিনি এক সময় হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু এরপর যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এই পর্যন্ত তিনবার ঋণ নিয়ে পরিশোধও করেছেন। নিজের শ্রম আর মেধা দিয়ে সাফল্য পেয়েছেন। বেকার তরুণদের সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি।