ঢাকা মহানগরের সরকারি স্কুলের অনেক শিক্ষকই ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী নন। তাঁরা প্রাইভেট পড়ানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত। বছরের পর বছর ধরে একই স্কুলে থেকে এসব শিক্ষকের একটি অংশ প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য করে আসছেন। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। রাজধানীর ২৪টি সরকারি স্কুলের ৫২২ জন শিক্ষককে এ জন্য বদলির সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল তদন্ত শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ কথা জানান।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তদন্ত দলের সদস্যরা ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। তাঁরা পরিদর্শনকালে দেখেন অনেক শিক্ষক পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে প্রাইভেট পড়ানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানান, রাজধানী ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল, শেরেবাংলা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ধানমন্ডি কামরুনন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়সহ ২৪টি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৫২২ জন শিক্ষক ১০ বছর থেকে ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এসব শিক্ষককে সরকারি নীতিমালা বা নির্দেশিকা অনুসারে বদলি করা হয়নি বা হচ্ছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো কোনো বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইংরেজি শিক্ষক বা গণিত শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। আবার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ইংরেজি বা গণিতের শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, তা সমন্বয় করা হচ্ছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে কোচিং বাণিজ্য ও সিন্ডিকেট।
এ জন্য প্রাইভেট বা কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার লক্ষ্যে ১০ বছর বা এর বেশি সময় যেসব শিক্ষক একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন, তাঁদের বিভাগের বাইরে বাইরে, পাঁচ বছরের বেশি কর্মরত শিক্ষকদের ঢাকা মহানগরের বাইরে বদলি এবং যেসব শিক্ষক তিন বছরের বেশি একই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন, তাঁদের অন্য স্কুলে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সাত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জেলার দায়িত্ব না দিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বদলি করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বদলি নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ জাতীয় কর্মকর্তাদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন না করতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।