দেশের দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলায় রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্সের আবিষ্কৃত নতুন ক্ষেত্রটি থেকে গ্যাসের প্রবাহ শুরু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে এই প্রবাহ শুরু হয়। এর মাধ্যমে ক্ষেত্রটিতে গ্যাসের মজুত প্রমাণিত হলো।
আজ সকালে ভোলা থেকে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ড্রিল স্টেম টেস্ট (ডিএসটি) ’-এর মাধ্যমে উঠে আসা গ্যাসের প্রবাহ অত্যন্ত শক্তিশালী। চাপ প্রায় পাঁচ হাজার পিএসআই। এর আগের পরীক্ষা নিরীক্ষায় ফল থেকে যা ধারণা করা হয়েছিল তা-ই প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষেত্রটিতে অন্তত ৭০০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাসের মজুত রয়েছে।
গত ২৩ অক্টোবর নতুন ক্ষেত্রটি আবিষ্কারের খবর প্রথম প্রকাশ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সেদিন মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এই খবর জানান।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুরে বিদ্যমান ক্ষেত্রটি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একই থানার টাবগী ইউপির মুলাইপত্তন গ্রামে অনুসন্ধান কূপ খনন করে নতুন এই গ্যাস ক্ষেত্রটির অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। তবে শাহবাজপুরের বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্রটি এবং মুলাইপতনে নতুন আবিস্কৃত ক্ষেত্রটি অভিন্ন কাঠামোর না কি ভিন্ন দুটি গ্যাস ক্ষেত্র জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপে পাওয়া তথ্য ও চিত্র অনুযায়ী দুটি কাঠামো আলাদা বলেই মনে হয়।
বাপেক্সের সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে ভোলায় ২৬৬ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের মাধ্যমে শহাবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রটির সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু ভোলায় আরও গ্যাস আছে বলে সংশ্লিষ্ট ভূতত্ত্ববিদেরা ধারণা করতেন। সেই ধারণা থেকেই ২০১৬ সালে পুরো দ্বীপের ৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালানো হয়। তাতে যে চিত্র পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই মুলাইপতনে অনুসন্ধান কূপ খননের স্থান নির্ধারণ করা হয়।
কূপটি খনন করা হয়েছে তিন হাজার ৫৫০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত। এর মধ্যে তিন হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার ৪৭০ মিটারের মধ্যে তিনটি স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাপেক্স ‘রূপকল্প ২০২১ ’-এর আওতায় পাঁচ বছরে ১০৮টি কূপ খননের যে পরিকল্পনা করেছে তার প্রথমকূপটিখনন করা হয়েছে মুলাইপতনে। এরপর সেখান থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে ‘ভোলা নর্থ’ নামে আরেকটি অনুসন্ধান কূপ খননের কাজ আগামী মাসেই শুরু করা হবে।
ভোলায় গ্যাস থাকলেও তার বাণিজ্যিক ব্যবহার নেই। শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে মোট চারটি কূপ খনন করা হয়েছে যার মোট উত্তোলন ক্ষমতা দৈনিক আট কোটি ঘনফুট। কিন্তু ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় দুটি কূপ বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য দুটি দিয়ে দৈনিক চার কোটি ঘনফুট উত্তোলন করে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্য গ্রাহকদের চাহিদা মিটানো হচ্ছে। ফলে বিনিয়োগের বিপরীতে বাপেক্সের কোনো লাভ হচ্ছে না।