১৯৪৪ সালের ৬ জুন পায়রার মাধ্যমে প্রথম মিত্রশক্তির কাছে খবর পাঠিয়েছিল ব্রিটেন৷ সেই শুরু৷ এরপর পাখি থেকে শুশুক, বাদুড় থেকে মৌমাছি এমন নানা প্রাণী বিভিন্ন যুদ্ধেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে৷
বিশ্বযুদ্ধে পত্রবাহক
গত কয়েক দশকে পাখি থেকে শুশুক, বাদুড় থেকে মৌমাছি এমন নানা প্রাণী সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে৷ পায়রাদের গতি এবং দিক নির্ণয়ের ক্ষমতা অসাধারণ৷ এ কারণে দুটি বিশ্বযুদ্ধেই তাদের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়েছে খবর আদান-প্রদানের জন্য৷ তাদের কারণে বেঁচেছে বহু মানুষের প্রাণ৷ তাই এই মহান কর্মের জন্য ডিকিন মেডেল দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে৷ এই পুরস্কারটি কিন্তু ভিক্টোরিয়া ক্রসের সমমানের!
ক্যামেরাবাহী পায়রা
পায়রাগুলো কেবল যে পত্রবাহক ছিল, তা কিন্তু নয়৷ জার্মানির জুলিয়ুস গুস্তাভ নয়ব্রোনার যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পায়রাদের গলায় ছোট্ট একটি ক্যামেরা বেঁধে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন৷ এমনকি যুক্তরাষ্ট্র পায়রার মাধ্যমে শত্রু ঘাঁটিতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করে তৈরি করেছিল প্রজেক্ট পিজন৷
মানুষের প্রাণের বন্ধু
মাটিতে পুঁতে রাখা মাইন অথবা বোমা খুঁজতে সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কুকুর৷ ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র ৪,০০০ যুদ্ধ কুকুর ব্যবহার করেছিল৷ এছাড়া ফাঁদ খুঁজে বের
করতেও কুকুরের জুরি নেই৷
বোমা ফেলা বাদুড়
৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বাদুড়ের গলায় বোমা বেঁধে শত্রু ঘাঁটিতে তা ফেলার পরীক্ষা করে৷ সেই থেকে বোমা ফেলতে বাদুড়ের ব্যবহার শুরু হয়৷
গুপ্তচর বিড়াল
৬০-এর দশকে আকুস্টিক কিটি নামে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ একটি প্রকল্প হাতে নেয়৷ উদ্দেশ্য সোভিয়েত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কথায় আড়িপাতা৷ অস্ত্রপচার করে একটি বাড়ালের দেহে একটি মাইক্রোফোন, ব্যাটারি এবং অ্যান্টেনা লাগানো হয়েছিল৷ তারপর সোভিয়েত কর্মকর্তা যে পার্কে বৈঠক করছিলেন, সেখানে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল সেই বেড়ালকে৷ ১৯৬৭ সালে অবশ্য এই প্রকল্প বাতিল করা হয়৷
পানির চর
১৯৬০ সাল থেকে নেভি মেরিন ম্যামল কর্মসূচির অংশ হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে সিন্ধু ঘোটক এবং শুশুককে ব্যবহার করা শুরু হয়৷ পানির তলায় শত্রুর চলাফেলার উপর নজরদারি, জাহাজ চলাচল এবং সমুদ্র তলদেশে পুতে রাখা মাইন শনাক্ত করার জন্য এদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হতো সে সময় থেকে৷
মৌ-বাহিনী
কুকুরা তাদের ঘ্রাণশক্তির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত৷ কিন্তু মৌমাছির ঘ্রাণশক্তি তাদের চেয়েও শক্তিশালী৷ ক্রোয়েশিয়ার গবেষকরা পরীক্ষা করে রেখেছেন যে, বোমা বানানোর উপাদান অনেক বস্তুর সাথে মিশিয়ে দিলেও মৌমাছি ঠিকই সেটা শনাক্ত করতে পারে৷ এমনকি পাঁচ কিলোমিটার দূরে মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনও শনাক্ত করতে পারে এরা৷
প্রাণরক্ষাকারী ইঁদুর
আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত তানজানিয়ায় বেলজিয়ামের এপিওপিও সংস্থাটি বড় ইঁদুরকে ল্যান্ডমাইন শনাক্ত করার কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে৷ সেখানে ৫৭টি ইদুঁর এই কাজে নিয়োজিত, যাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা হয়৷
নিহতদের স্মরণ
সেনাবাহিনী বরাবরই প্রাণীদের বিশেষ দক্ষতার উপর নির্ভরশীল৷ তবে যুদ্ধের সময় বেশিরভাগ প্রাণীর অবদানই অগোচরে থেকে যায়৷ বিভিন্ন যুদ্ধে যেসব প্রাণী অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, তাদের স্মরণে লন্ডনের হাইড পার্কে প্রথম একটি স্থায়ী স্মারক নির্মাণ হয়, যার নাম ‘অ্যানিমেল্স ইন ওয়ার মেমোরিয়াল’৷ ২০০৪ সালে এটা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল৷-ডিডাব্লিউ