শুধু মূল বিষয়গুলোর পরীক্ষা হবে জেএসসিতে

Slider শিক্ষা

68cc1b908456a068cf4100a93058db73-78c78ed

 

 

 

 

আগামী বছরের (২০১৮) জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় আরও কয়েকটি বিষয় বাদ দিয়ে কেবল মূল বিষয়গুলোর ওপর পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে এসএসসিতেও মূল বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ  বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার চাপ কমাতেই তাঁরা এমন পরিকল্পনা করছেন। তবে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। খুব শিগগির এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তাও এই উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেছেন।

বর্তমানে জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রায় ২৫ লাখ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দেয়। এত দিন জেএসসিতে ১৩টি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছিল। সেখান থেকে কমিয়ে ১ নভেম্বর শুরু হওয়া পরীক্ষায় তিনটি বিষয় কমানো হয়েছে। এই তিনটি বিষয় হলো কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং চারু ও কারুকলা। এবার ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা হবে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন সেখান থেকেও আরও কয়েকটি বিষয় বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে এ বিষয়গুলোর ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের নম্বরও বোর্ডের পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে উল্লেখ থাকবে। তবে সেটা বোর্ডের পরীক্ষার ফলে প্রভাব ফেলবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা হবে এক পত্রে। এখন দুই পত্র মিলিয়ে ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। সেখানে এখন দুই পত্র মিলিয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। একইভাবে ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাও একই পত্রে নেওয়া হবে। এ ছাড়া গণিত, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষাগুলো হবে ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে। অর্থাৎ মূল বিষয়গুলোর ওপর বোর্ডের পরীক্ষা হবে মোট ৬০০ নম্বরের। বাকি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি), কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, আরবি, সংস্কৃতি, পালির মতো বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা হবে বিদ্যালয়ে। ইতিমধ্যে বাদ দেওয়া তিনটি বিষয়ের মূল্যায়নও বিদ্যালয়েই হচ্ছে। এ ছাড়া ‘কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা’র নাম পরিবর্তন করে প্রি-ভোকেশনাল করা হচ্ছে।

গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও আগামী বছর থেকে জেএসসি ও জেডিসিতে আরও কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা কমানোর বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকার কথা জানিয়ে বলেন, এর ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর লেখাপড়ার চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা থেকেও বেশ কিছুসংখ্যক বিষয় বাদ দিয়ে মূল বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষা থেকে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয় দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই এত বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হয় না। মূল বিষয়গুলোর ওপরই পরীক্ষা হয়। কিন্তু এ দেশে পরীক্ষার চাপে শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে হয়। এ ছাড়া লম্বা সময় ধরে পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার কারণে নিয়মিত ক্লাসও বাধাগ্রস্ত হয়।

শিক্ষাবিদেরাও পাবলিক পরীক্ষায় বিষয় কমানোসহ মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ১৫ দফা সুপারিশ করেছিলেন। জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে পরীক্ষা কমানোর উদ্যোগ ইতিবাচক।

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, তিনিও মনে করেন, বোর্ডের পরীক্ষা শুধু মূল বিষয়ের ওপরই হওয়া উচিত। এতে প্রাইভেট ও কোচিং-বাণিজ্য যেমন কমবে, তেমনি শিক্ষার্থীর ওপর থেকে মানসিক নির্যাতনও কমবে। তবে যে বিষয়গুলোর মূল্যায়ন বিদ্যালয়ে হবে, সেগুলোর তদারক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *