চোখ শুকিয়ে খটখটে। মনে হয় কিছু একটা চোখে পড়েছে। কখনো চুলকায়। আলো লাগলে আরও বেশি যেন খচখচ করে। এই সমস্যার নাম ড্রাই আই সিনড্রোম বা শুষ্ক চোখ। চোখের ওপর চোখের পানির একটা পাতলা আস্তরণ আছে। জল, তেল, পিচ্ছিল মিউকাস আর জীবাণুরোধী অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি এই চোখের পানি। চোখের গ্রন্থি থেকে কোনো কারণে এই পানি নিঃসরণ কম হলে চোখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। তখনই এসব সমস্যা দেখা দেয়।
নানা কারণ আছে চোখের পানি নিঃসরণ কমে যাওয়ার। বয়স বৃদ্ধি একটা বড় কারণ। ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রায়ই এটা দেখা যায়। বিশেষ করে, নারীদের মেনোপজের পর এটা একটা পরিচিত সমস্যা। এ ছাড়া কনট্রাক্ট লেন্স ব্যবহার, সব সময় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বা হিটার দেওয়া কক্ষে সময় কাটানো, বাইরে শুষ্ক ঠান্ডা হাওয়ায় থাকা, অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার, ধূমপান, দীর্ঘ সময় বিমান ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয় এটি বাড়িয়ে দিতে পারে। কখনো কখনো কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় এই সমস্যা দেখা দেয়। আবার রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস, জোগ্রেন সিনড্রোম বা থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যাদের ঘুমের সময় চোখ পুরোপুরি বন্ধ হয় না, যেমন স্ট্রোক বা স্নায়ু সমস্যার রোগী, তাদেরও চোখ শুকিয়ে যায়।
চোখের শুষ্কতার চিকিৎসায় শুরুতেই কারণ নির্ণয় করা দরকার। অন্তর্নিহিত কোনো রোগ থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে। কিছু জীবনাচরণ পদ্ধতির পরিবর্তন করা যায়। যেমন দীর্ঘ সময় কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ না রেখে মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া। ঘরে হিটার বা এসি ব্যবহার করলে আর্দ্রতা রক্ষা করার চেষ্টা করা। স্নায়ু রোগের চিকিৎসা করা। পাশাপাশি চক্ষু চিকিৎসক কৃত্রিম চোখের পানি বা অন্য কোনো ড্রপ দিতে পারেন। রাতে বেশি শুকিয়ে গেলে চোখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা বা অয়েন্টমেন্ট দিতে পারেন। শুষ্ক চোখের চিকিৎসা না করা হলে এ থেকে প্রদাহ হতে পারে।
ডা. পূরবী রাণী দেবনাথ : চক্ষু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল