সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বখাটেদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার জয়শ্রী চক্রবর্তী (১৭) নামের একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। গত বুধবার শ্যামনগরের বয়ারসিং গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জয়শ্রী বয়ারসিং গ্রামের মাখন চক্রবর্তীর মেয়ে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত শুক্রবার নিহত কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে বখাটে শেখর মণ্ডলসহ তাঁর তিন-চারজন সহযোগীর বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বখাটেদের ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছে।
নিহত কিশোরীর ভাই কাজল চক্রবর্তী জানান, জয়শ্রী উপজেলার নওয়াবেঁকী মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। কলেজে যাতায়াতের পথে পাশের বড়কুপোট গ্রামের শেখর মণ্ডল প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন জয়শ্রী বাড়ি ফেরার পথে নওয়াবেঁকীর বাঁশের হাটের সামনের রাস্তায় শেখর তিন-চারজন সঙ্গী নিয়ে তার পথ রোধ করেন। এ সময় তাঁরা তাঁর বোনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ও কাঁচি দিয়ে মাথার চুল কেটে দেন।
কাজল চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, চুল কেটে দেওয়ার পর জয়শ্রী কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পথ ধরে। কর্মকারপাড়া পর্যন্ত পৌঁছানো মাত্রই শেখর মণ্ডল মোটরসাইকেলে করে বন্ধুদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে ফাঁকা রাস্তার মধ্যে জয়শ্রীর ওড়না কেটে নেন। এ সময় জয়শ্রীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে শেখর সহযোগীদের নিয়ে পালিয়ে যান।
জয়শ্রীর বাবা মাখন মণ্ডল জানান, বাড়িতে ফিরে জয়শ্রী ঘরের মধ্যে ঢুকে কান্নাকাটি করতে থাকে। কারণ জানতে চাইলে পথে সে শেখর মণ্ডলসহ তাঁর বন্ধুদের হাতে হেনস্তার ঘটনা খুলে বলে।
মাখন মণ্ডল বলেন, আগামী মাসেই মেয়ের বিয়ের দিন ধার্য ছিল। তাই বিষয়টি তাঁরা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর জয়শ্রী ঠাকুরঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। উদ্ধার করে প্রথমে শ্যামনগর ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত শেখর মণ্ডলের বাড়ি বড়কুপোট গ্রামে। সেখানে গিয়ে ঘরে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মান্নান আলী জানান, ঘটনাটি ২৫ অক্টোবর হলেও ২৭ অক্টোবর তাঁদের জানানো হয়েছে। জয়শ্রীর পরিবার দেরিতে জানানোর সুযোগে আসামি পালিয়েছে।