তুরস্কের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন টিআরটি’র দু’জন সাংবাদিককে আটক করেছে মিয়ানমারের পুলিশ। তাদের সঙ্গে আটক করা হয়েছে তাদের দোভাষী ও গাড়ির চালককে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা মিয়ানমারের পার্লামেন্ট এলাকার কাছে ড্রোন উড়িয়েছিলেন। এমনিতেই মিয়ানমার ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। তার মধ্যে নতুন করে সাংবাদিক গ্রেপ্তারে পরিস্থিতি আরো উত্তেজনাকর হয়ে উঠতে পারে। আটক দু’ সাংবাদিকের নাম লাউ হন মেং ও মক চোই লিন।
প্রথমজন সিঙ্গাপুর থেকে এবং দ্বিতীয় জন মালয়েশিয়া থেকে গিয়েছেন সেখানে। তাদেরকে আটক করে মিয়ানমারের রাজধানী ন্যাপিড’তে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
স্থানীয় পুলিশের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, শনিবার সকালে তাদেরকে আটক করা হয়। এর আগে মিয়ানমারে তাদের দোভাষী, স্থানীয়ভাবে সুপরিচিত সাংবাদিক অং নাইং সোয়ে’র ইয়াঙ্গুনের বাসা শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘেরাও করে পুলিশ। সেখান থেকে জব্দ করে তার কম্পিউটার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট। তারা অং নাইং সোয়ে’র বিভিন্ন ডকুমেন্টের তল্লাশি করতে থাকে। ন্যাপিড পুলিশ স্টেশন-১ এর কর্মকর্তা শয়ে থাউং বলেছেন, তারা মোট চারজনকে আটক করেছেন। তবে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তিনি চলমান তদন্তের কথা তুলে কোনো কথাই বলেন নি। তিনি শুধু বলেছেন, এখনও বিষয়টিতে আমরা তদন্ত করছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলা যাবে না। ওদিকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভি বলেছে, ড্রোন ব্যবহার করে পার্লামেন্টের ছবি ধারণ করার অনুমতি ছিল না ওই সাংবাদিকদের। এই টিভিতে ওই দু’ সাংবাদিকদের ভিসা দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ঘটনায় সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার দূতাবাসকে জানিয়েছে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তুরস্কের টিভি টিআটি। এ নিয়ে এ বছর মিয়ানমারে আটক করা সাংবাদিকদের সংখ্যা দাঁড়ালো সাত। শীর্ষ স্থানীয় অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো সতর্কতা উচ্চারণ করেছে। তারা বলছে, সামরিক জান্তার শাসনের অবসান হওয়ার পর মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যম যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তা জাতীয় নেত্রী অং সান সুচির অধীনে উল্টোপথে যাচ্ছে। শনিবার আটক স্থানীয় সাংবাদিক অং নাইং সোয়ে আন্তর্জাতিক অনেক মিডিয়ায় কাজ করেছেন। প্রায় ৫ দশক সামরিক স্বৈরশাসকের অধীন থেকে দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করা নিয়ে তিনি বহু রিপোর্ট লিখেছেন। তার মা থানডার বলেছেন, পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে। অং নাইংয়ের কমপিউটার ও বিভিন্ন কাগজপত্র তল্লাশি করেছে। তার পরিচয় পত্র দেখতে চেয়েছে। অং নাইং সোয়ে’র মেমোরি কার্ড নিয়ে গেছে। তার কমপিউটার খোলার চেষ্টা করেছে পুলিশ। কিন্তু পারে নি। থানডার বলেন, আমি তাদের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট দেখাতে বলি। কিন্তু পুলিশ বলেছে, তাদের সেটা দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, তারা কোনো মাদকের সন্ধান করছে না। এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ইয়াঙ্গুনের মিঙ্গালার তাউং নাউন্ট জেলার প্রশাসক ইয়ে উইন তুন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, পুলিশের কাছে কোনো ওয়ারেন্ট ছিল না। এটার প্রয়োজন ছিল না তাদের। তারা যদি মাদক বা অবৈধ কার্ড গেমের তল্লাশিতে চায় তাহলেই ওয়ারেন্ট প্রয়োজন হয়। তিনি আরো জানান, জেলার পুলিশ প্রধান, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা, অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা, পুলিশের স্পেশাল শাখার কর্মকর্তারা, পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা সহ প্রায় ২৫ জন সদস্য এই তল্লাশিতে অংশ নেন। উল্লেখ্য, গত ২৫ শে আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পোস্ট ও ক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)। তারপর থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সহ নিরাপত্তা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী, স্থানীয় দোসররা নৃশংস নির্যাতন চালায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর। এর ফলে বাস্তুচ্যুত কমপক্ষে ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। ওদিকে সেপ্টেম্বরের শুরুতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান।