অনেক বাংলা সিনেমায় এমনটা দেখা যায়—ধনীর দুলালির সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে গরিব ঘরের কোনো ছেলের। সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে সেই ভালোবাসায় বাধা হয়ে দাঁড়ান নায়িকার বাবা। অতঃপর…।
এবার বাংলা সিনেমার এমন গল্পের সঙ্গে মিল পাওয়া গেল যুক্তরাজ্যের যুগলের। তবে প্রায় ৪০ বছর পরে তাঁদের বিয়ের সানাই বেজেছে। এই যুগল হলেন লিচেস্টারশায়ারের বাসিন্দা বিল ব্রুকম্যান ও ম্যাডেলিন কোবার্ন।
১৯৭৮ সালে বিল ও ম্যাডেলিনের মধ্যে যখন মন দেওয়া-নেওয়ার শুরু, তখন বিলের বয়স ছিল ২৩ বছর। ম্যাডেলিন ছিলেন মোটে ১৬ বছরের এক কিশোরী। এক অনুষ্ঠান করতে গিয়ে দুজনের মধ্যে প্রথম পরিচয়। বিল একটি নাটকের নির্দেশনা দিয়েছিলেন যাতে অভিনয় করেছিলেন ম্যাডেলিন। এরপরই ম্যাডেলিনকে ডেটিংয়ের প্রস্তাব দেন বিল। ম্যাডেলিনও ‘হ্যাঁ’ বলে দেন।
কিন্তু বেঁকে বসেন মেয়ের বাবা। ছেলেকে তাঁর কাছে ‘বেশি শিল্পমনা’ মনে হয়েছিল। তাই মেয়েকে বের হতেই দেননি তিনি। ফলে ম্যাডেলিনের আর বিলের সঙ্গে দেখা করা হয় না। বাবার মত মেনে সেই থেকে বিচ্ছেদের শুরু।
বিল বলেন, ‘ভাগ্যের বিষয়টি খুবই অদ্ভুত। কিন্তু আমি অবশ্যই বলতে চাই যে, বিয়ের জন্য এই ৪০ বছর অপেক্ষা করারও মূল্য আছে।’
২০০৮ সালে ফের এই বাস্তব জীবনের নায়ক-নায়িকার দেখা হয়। লিচেস্টারশায়ারে একটি স্কুলের প্রকল্পে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। আবার শুরু হয় প্রেম।
শিল্পকলা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন ম্যাডেলিন। ১৯৭৮ সালে প্রেমিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে তিনি আর বিয়ে করেননি। তবে বিল বিয়ে করেছিলেন। আগের সংসারে তাঁর দুই ছেলেও রয়েছে।
পরে বিবিসি রেডিও ফোরের আয়োজনে দ্য লিসেনিং প্রজেক্ট অনুষ্ঠানে বিল ও ম্যাডেলিনের এই অভিজ্ঞতার কথা রেকর্ড করা হয়। ওই অনুষ্ঠান চলার সময়েই বিল বিয়ের প্রস্তাব দেন ম্যাডেলিনকে। কিন্তু ম্যাডেলিন তখন কোনো উত্তর দেননি। পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাঁটু গেড়ে বিল বিয়ের প্রস্তাব দেন প্রেমিকাকে। ম্যাডেলিনের কি আর তখন না করার জো আছে! শেষে লজ্জামাখা মুখে তিনি বলে দিলেন, হ্যাঁ।
গত আগস্ট মাসে বিয়ে করেছেন বিল ও ম্যাডেলিন। শেষ পর্যন্ত ৪০ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো। ম্যাডেলিন বলেন, ‘আমরা অনেক দিন পর আবার নিজেদের ফিরে পেয়েছি। আমাদের জন্য এটি খুব বিশেষ একটি ঘোষণা। তাই আমি মনে করি, আমরা খুব ভাগ্যবান।’