সরকার জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল দীর্ঘ নয় বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে আমরা ব্যাপক উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করেছি। উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি।’
রাজধানীর মিরপুরে বস্তিবাসীদের জন্য প্রথমবারের মতো ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে পরিত্যক্ত বাড়িগুলোতে প্রথমবারের মতো আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে কেউ আবাসনহীন থাকবে না। আমাদের নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে গৃহহীন থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার কঠোরভাবে জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীদের দমন করেছে। আমরা জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা চাই এবং ২০১৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় উন্নয়নের জন্য আমরা যথেষ্ট সময় পেয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে সকল বাধা অতিক্রম করে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ায় দেশের উন্নয়ন জোরদার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে চাই এবং বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ তিনি গত নির্বাচনে তাঁর দলকে সমর্থন দেওয়ায় দেশের সব মানুষকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বস্তিবাসীরা বস্তিতে অমানবিক জীবন যাপন করে। তাদের ঘরভাড়ায় অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। অথচ বস্তিতে তাদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদের দুর্ভোগ লাঘব করা।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিন্নমূল মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমরা যদি সমাজের ছিন্নমূল মানুষের জন্য কিছু করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন সার্থক হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সারা দেশে বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। ভাড়ার টাকায় তারা এসব ফ্ল্যাটে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘এখন আর গ্রামাঞ্চলে কুঁড়েঘর দেখা যায় না। বরং কুঁড়েঘরের জায়গায় এখন টিনের ঘর তৈরি হচ্ছে। আমাদের এটা করার সামর্থ্য হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর সরকারের শাসনামলে আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং গৃহহীন ও বস্তিবাসীদের জন্য ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা নগরীর ভাষানটেক এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১৬ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম।’
বস্তিবাসীদের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগের অংশ হিসেবে এবং জাতীয় আবাসন নীতিমালা-২০১৬-এর আলোকে বস্তিবাসীদের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে রাজধানীর মিরপুর-১১ নং সেকশনে ১০ একর জমির ওপর ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। প্রকল্পের প্রথম ধাপে দুই একর জমির ওপর ১৪ তলা পাঁচটি ভবনে ৫৩৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে এবং দ্বিতীয় ধাপে বাকি আট একর জমিতে আটটি ১৪ তলা ভবনে ৯ হাজার ৪৬৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। প্রথম ধাপে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা।
ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুরে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ২০২ ফ্ল্যাট
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ২ দশমিক শূন্য ৭ একর জমির ওপর ৩৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। এর মধ্যে ২০২টি ফ্ল্যাট সরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিক্রি করা হবে এবং অবশিষ্ট ৫১টি ফ্ল্যাট গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কাছে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে গৃহায়ণসচিব শহীদুল্লা খন্দকার প্রকল্পের একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সুরাইয়া বেগম এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অন্যান্যের মধ্যে শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা বক্তব্য দেন।