মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্যানার লাগানো ও মঞ্চ দখল নিয়ে হট্টগোল করেছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মৌচাক মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চে উড়ালসড়কটি উদ্বোধনের আগে এসব ঘটনা ঘটে। ঘটনার ঘণ্টা খানেক পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে উড়ালসড়কটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘অনেক প্রতীক্ষার এই উড়ালসড়কটির উদ্বোধন ও সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর ছিল আজকের অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক নেতা-কর্মী এ অনুষ্ঠানকে বানচাল করতে মরিয়া ছিল। তারা মঞ্চে উঠে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। অথচ এ অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। আর এটি দলীয় কোনো অনুষ্ঠানও ছিল না।’
ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টায় এই উড়ালসড়কের উদ্বোধন অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু সকাল নয়টার দিকে অনেকগুলো বড় ব্যানার মঞ্চের চারপাশে টানিয়ে দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এতে মঞ্চের ভেতর গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়। তাই সকাল ১০টার দিকে ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলতে মাইকে নির্দেশনা দেন ডিএসসিসি মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব কাজী আবুল কালাম আজাদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মঞ্চে উঠে আবুল কালাম আজাদকে হুমকি-ধমকি দেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম, গোলাম আশরাফ তালুকদার, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নার্গিস রহমান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামিলি, এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রব। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আরও ১০ থেকে ১৫ জন ছিলেন। এঁরা সবাই ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের অনুসারী বলে পরিচিত। এঁরা আবুল কালাম আজাদকে ধাক্কা দিয়ে তাঁর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন। দলের আরেক অংশ মঞ্চের সামনের চেয়ার ছোড়াছুড়ি করে। এতে উপস্থিত সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েক মিনিট পর মঞ্চে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি তাঁদের সবাইকে মঞ্চ থেকে নামার নির্দেশ দেন। পরে সাঈদ খোকন মাইকে বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের জন্য খুশির দিন। কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এ অনুষ্ঠান বিনষ্ট করবেন না।’
সাঈদ খোকনের বক্তব্যের পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। এ সময় তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা আবার মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করেন। এতে শাহে আলম মুরাদ বাধা দেন। তাঁরা মঞ্চের সামনের জায়গায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া আরেকটি পক্ষ আশপাশের সড়কগুলোতে দলীয় ব্যানার নিয়ে মহড়া দেয়।
মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বুধবার রাত থেকেই তাঁরা মঞ্চের চারপাশে ব্যানার লাগানো শুরু করেন। এতে মঞ্চের পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় তা খুলে দূরে লাগাতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা তা না করে উল্টো মঞ্চ দখলের চেষ্টা করেন। আমার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে হট্টগোল হয়েছে, এমনটা শুনেছি। কিন্তু বড় ধরনের তেমন কিছু হয়নি।’
আমন্ত্রণ ছাড়া অনুষ্ঠানে আপনারা কীভাবে গেলেন—জানতে চাইলে শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘এটি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার অনুষ্ঠান। আমরা সেখানে যাব, এটাই স্বাভাবিক।’