আয়েশা সিদ্দিকার কাছে মালিবাগ-মৌচাক ছিল এক অভিশাপের মতো। মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াতের পথে কত বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন, তার হিসাব নেই। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের উদ্বোধন হলো। আয়েশা সিদ্দিকার মতো স্থানীয়রা অনেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। আবার যানজট না কমে বাড়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
রিকশাসহ বিভিন্ন যান উল্টে যাওয়া ছিল মৌচাক মোড়ের নিত্যকার দৃশ্য। আর যানজটে কত ঘণ্টা অপচয় হয়েছে, তারও হিসাব নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ক্রেতা কমেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের আগে বেশ কিছুদিন থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উড়াল সড়কের ছবি দিয়ে অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজার, সিদ্ধেশ্বরীসহ আশপাশের এলাকার মার্কেটগুলোর সাপ্তাহিক ছুটি। তবে আজ দেখা যায়, ছোট ছোট দোকানগুলো খোলা। মৌচাক মার্কেটের পাশে ফুলের দোকানি মো. আলম বলেন, ‘এই কয়টা বছর যে কষ্ট করছি। তা ১০টা ফ্লাইওভার বানিয়ে দিলেও পোষাবে না। তবুও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে শেষ পর্যন্ত খুলছে।’ তিনি আরও বলেন, উড়াল সড়ক নির্মাণে যাতায়াতের কষ্টের পাশাপাশি এলাকার ব্যবসায় ‘ধস’ নেমেছে। ক্রেতা কমে গিয়েছিল। এখন পুরোনো ক্রেতা ফিরে এলে উড়াল সড়কের সুফল পাবেন কিনা বুঝতে পারবেন।
ব্যবসাতে ক্ষতি হওয়ার কথা বললেন আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী। মৌচাক মার্কেটের ব্যবসায়ী শাহিন মোল্লা উদ্বোধনের আয়োজন দেখতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, উড়াল সড়কের কাজ শুরু হওয়ার আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ বিক্রি হতো, কাজ শুরুর পরে এক সপ্তাহেও তা হয়নি। শাহিন বলেন, ‘অন্য এলাকা থেকেও আগে মৌচাকে আসত কিনতে। কিন্তু এখন এলাকার কাস্টমারই পাই না। সব মার্কেটের একই দশা।’
স্বস্তির পাশাপাশি যানজট না কমে বাড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। একটি ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী শিতন বলেন, ‘রাস্তা ঠিক হইছে, এইটাই বড় কথা। কিন্তু রাস্তা আগের চেয়ে ছোট হইছে। ফ্লাইওভারের ওপরে সিগন্যাল বসাইছে আর গাড়ি যেদিক দিয়েই নামুক ওইখানে জ্যাম লাগবই।’
মো. রশিদ নামের এক দোকানি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোকে যদি উড়াল সড়ক ব্যবহারে বাধ্য করা হয়, তাহলে যানজট কমবে। কিন্তু ইচ্ছা মতো চলাচল করতে দিলে আগের মতোই হবে। ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণের ওপর এখন অনেক কিছু নির্ভর করছে।
সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা সুমনা রহমান মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলেন। এই পথের নানান স্মৃতি মনে করে বলেন, শিক্ষার্থীদের কষ্ট হয়েছে বেশি। এখন সবকিছু ঠিক হয়ে গেলেই স্বস্তি মিলবে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। প্রথমে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে।