কোনো দেশের বৈদেশিক নীতি চাট্টিখানি জিনিস নয়। রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক ছাড়া সাধারণ নাগরিকদের রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বোঝার কথা নয়। কিন্তু দেশটা যেহেতু সাধারণ নাগরিকদের, শুধু রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের নয়, তাই বৈদেশিক নীতির কারণে রাষ্ট্রে কী ঘটে বা ঘটতে পারে, তা আঁচ করতে পারে নাগরিকেরা। বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করেন রাজনৈতিক নেতারা, তা বাস্তবায়নের বা কার্যকর করার দায়িত্ব কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের। এ ব্যাপারে সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নিধিরাম সরদার—আসল সরদার রাজনীতিক ও কূটনীতিকেরা।
সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকটে নিজেদের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে একাধিক দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা নাগরিক সমাজের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তাক করে অনুযোগ করেছেন: তাঁরা এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করেননি। সবশেষে পররাষ্ট্রসচিব যেদিন এই অভিযোগ করেন, তারপর কয়েকটি চ্যানেল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। কোনো কোনো চ্যানেলে আমারও ডাক পড়ে। খুব বড় গলায় কথা বলতে পারিনি। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলতেই হয়েছে।
স্বদেশের সামরিক বাহিনীর দ্বারা অত্যাচারিত ও বিতাড়িত হয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে আসছিল, তখন বর্ডার গার্ড ও কর্মকর্তারাই যা যা করার করছিলেন। চরম উসকানির মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার সীমাহীন সংযমের পরিচয় দিয়েছে। মিয়ানমার সরকারের বর্বরতার নিন্দা এবং বাংলাদেশ সরকারের মানবিক তৎপরতার প্রতি সমর্থন জানানো ছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আর কী করণীয় ছিল? তবে সেটা খুব কম হলেও একেবারে যে হয়নি, তা নয়। প্রথম কিছুদিন ঢাকায় এবং অন্যান্য শহরে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। আমিও অংশগ্রহণ করেছি। পত্রপত্রিকায় যা লেখালেখি হয়েছে, তা নাগরিক সমাজেরই কাজ। আমরা গোলটেবিল বৈঠক করেছি, তাতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার কী করতে চাইছে, সে ব্যাপারে মানুষের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। বিশেষ করে, বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, যখন সীমান্তরক্ষী বাহিনী থেকে ঘোষিত হলো যে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একসঙ্গে যৌথভাবে সন্ত্রাস দমন অভিযান চালাবে। ওই কথায় সাধারণ মানুষ তাদের সাধারণ বুদ্ধিতে যা বোঝে, তা হলো মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এতটাই ভালো যে সে দেশে যারা ‘সন্ত্রাসী’ বলে চিহ্নিত, তাদের শায়েস্তা করার জন্য বাংলাদেশও একপায়ে খাড়া। যৌথ সন্ত্রাস দমনের কথা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যদি একসঙ্গে ঘোষণা করত, তাহলেও তার গুরুত্ব ছিল। একতরফা বন্ধুত্বের মূল্য কম।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারাই স্থাপন করে দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সরকার একটি প্রগতিশীল ও গতিশীল পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। তবে পররাষ্ট্রনীতি কোনো ঐশী বিধান নয় যে তা পরিবর্তনশীল নয় এবং চিরকাল একই রকম থাকবে। রাষ্ট্রের স্বার্থে মূল জায়গায় ঠিক থেকে তার পরিবর্তন ও সংস্কার হয়ে থাকে। দু-আড়াই বছর আগে এক সামাজিক অনুষ্ঠানে কথায় কথায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের কূটনীতিকদের ধারণা কী রকম? তিনি যা বলেন তাতে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি বলে দুঃখিত।
সাবেক পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের (পিএফএস) কর্মকর্তাদের ইংরেজিজ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলবে না। স্বাধীনতার পর সত্তর ও আশির দশকে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই অবসরে চলে গেছেন। কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাই সাধারণত ফরেন সার্ভিসে যান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মুক্তিযোদ্ধা-কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ যখন ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল ছিলেন, তখন তিনি বাইরে থেকে অনেককে নিয়ে লেকচার দেওয়ান। আমাকেও বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাস ও তার স্বাধিকারসংগ্রাম সম্পর্কে বলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে দেখেছি অনেক উজ্জ্বল তরুণ-তরুণী। কেউ কেউ ছিলেন স্থাপত্য বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী। এত দিনে তাঁরা সিনিয়র হয়ে গেছেন। মহিউদ্দিন ভাইয়ের সময় একাডেমির পুরোনো গণভবন বুদ্ধিবৃত্তির আলোচনার একটি কেন্দ্র হয়ে ওঠে। শিক্ষাবিদ, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকেরা যেতেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আড্ডা হতো, খানাপিনাও হতো।
১৯৯৬-২০০০-এর সরকারের সময় তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৯-এর সরকারের সময়ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের দাওয়াত দিয়ে মতবিনিময় করেছে। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করত। যেমন সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ বা সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাতে সরকার উপকৃত হোক বা না হোক, নাগরিক সমাজ সরকারের অবস্থানটা অবগত হতো।
একটা রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য সামান্য নয়। প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেটা অপ্রত্যাশিত অল্প সময়ে অর্জিত হয়। কিন্তু সেখানেও কূটনীতিকদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। তারপর সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তি। সেখানে বড় বাধা ছিল চীন। কিন্তু শেষ পর্যায়ে চীন ভেটো না দেওয়ায় বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হয়। ১৯৭৪-এ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু যেদিন জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন, সেদিন বুক ভরে যায়। তখন এখনকার মতো অতি উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। তাঁর ভাষণের প্রতিবেদন তৈরি করার বিরল সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এখন গুরুত্ব না থাকলেও আশির দশক পর্যন্ত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) এবং ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) জাতিসংঘের পরেই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা ছিল। সেই ন্যাম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর যোগদান এবং তাঁর সদস্যপদ প্রাপ্তিও বাংলাদেশের খুব বড় কূটনৈতিক সাফল্য, যেখানে তিনি বিশ্বের বড় বড় নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের মধ্যে সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল, কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, সেনেগালের প্রেসিডেন্ট সেনঘোর, সাবেক যুগোস্লাভিয়ার নেতা মার্শাল টিটো, মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত প্রমুখ ছিলেন।
ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স) এখন মেরুদণ্ডহীন সাক্ষীগোপাল। সত্তরের দশকে তা ছিল প্রভাবশালী সংস্থা। পাকিস্তান ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার সদস্য যাতে না হতে পারে বাংলাদেশ, সে জন্য পাকিস্তান প্রভাব খাটায়। কিন্তু বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে তা কাজে দেয়নি। ওআইসিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাটা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। ১৯৭৪-এর ২১ ফেব্রুয়ারির দিন ওআইসির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুমেদিনের বিশেষ বিমানে ঢাকায় আসে। তাতে নেতৃত্ব দেন কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাবাহ আল-সাবাহ। বলতে গেলে সারা রাত বঙ্গবন্ধু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। আমরা বাইরে বসে ছিলাম। ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের স্বীকৃতিকে স্বাগত জানান। ওই দিনই বুমেদিনের বিমানে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল নিয়ে লাহোরে যান। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেওয়া এবং ওআইসিতে বাংলাদেশের যোগদান ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় কূটনৈতিক ঘটনা।
বঙ্গবন্ধু চীন ও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যেসব উদ্যোগ নেন, তা আমাদের মতো সাধারণ মানুষও কিছুটা অবগত আছি। এই মিয়ানমারের মাধ্যমেই তিনি চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের নাগরিকদের হজ পালন করতে পবিত্র মক্কা শরিফে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধু মিসরের মাধ্যমে সৌদি আরবের সঙ্গে হজের ব্যাপারে যোগাযোগ করেন। আলজিয়ার্সে তিনি সাক্ষাতে বাদশাহ ফয়সলের সঙ্গেও কথা বলেন। স্বীকৃতি না দিলেও ১৯৭৪-এর শেষ দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন কৌশল করে জেদ্দা সফর করেন। সেসব ছিল অসামান্য কূটনৈতিক সফলতার দৃষ্টান্ত।
অনেক ছোট ঘটনা অসামান্য কূটনৈতিক সাফল্য আনে। ১৯৭৩-এ ইরাক-মিসর-সিরিয়া-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ তখনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবু বাংলাদেশ অবস্থান নেয় মিসর-সিরিয়ার পক্ষে। সৈন্য পাঠানো যায় না, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আর্মি মেডিকেল টিম পাঠানোর প্রস্তাব দিলেন মিসরকে। শুধু তা-ই নয়, তিনি বাংলাদেশের চা পাঠালেন আরব সৈন্যদের জন্য। খুব ভালো কাজ হয়েছিল তাতে।
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনের আগে থেকে ’৮৫ পর্যন্ত আমি বেলগ্রেডের নন-অ্যালাইন্ড নিউজ পুলের জন্য কাজ করেছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সটার্নাল পাবলিসিটি উইংয়ের সহযোগিতায়। ওই সময়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকদের কিছু বড় সাফল্য কাছ থেকে দেখেছি। দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতিই অনুসরণ করেন এবং সফলও হন। ওআইসির তিন সদস্যবিশিষ্ট শান্তি মিশনে তিনি ছিলেন একজন।
জাপান একটি প্রভাবশালী দেশ। তার বৈদেশিক বন্ধুরা বিশ্বমোড়ল। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশ ও জাপান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও ভালো। অনেকের ধারণা ছিল, বাংলাদেশের পরাজয় অবধারিত। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলাদেশ জয়লাভ করে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হক, জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি কে এম কায়সার, মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ফারুক সোবহান (পরে পররাষ্ট্রসচিব) প্রমুখের তৎপরতার কথা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুল হক একটি মাত্র মাঝারি আকারের সুটকেস নিয়ে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রার্থিতার পক্ষে লবি করতে সফর করেছেন।
সিভিল সোসাইটির লোকদের দুই ঘা দেওয়া এখন খুব সহজ। রোহিঙ্গা নিয়ে তাঁরা কিছু করছেন না, সেটা খুবই দোষের। কিন্তু তাঁরা যখন উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের বিরোধিতা করেন, জনবহুল এলাকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন চান না বা রামপাল নিয়ে আন্দোলন করেন, তখনো তাঁরা গালমন্দ শোনেন। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের লোকজন নিধিরাম সরদার। তাঁদের মুরোদ খুব কম, তার মধ্যে তাঁরা রাজনৈতিক কারণে বিভক্ত।
কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা—সবকিছুই নিহিত। কূটনৈতিক অদক্ষতায় দেশের খুব বড় ক্ষতি হয়। মিয়ানমারের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ইস্যু জাতিগত, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক। ধর্মীয়ও নয়, জাতিগতও নয়। এই রোহিঙ্গারা যদি মুসলমান বা হিন্দু না হয়ে বৌদ্ধও হতো, তবু বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিত। তারা যদি রোহিঙ্গা জাতিসত্তার মানুষ না হয়ে অন্য জাতিসত্তার মানুষ হতো, তাহলেও তাদের আশ্রয় দেওয়া হতো। কারণ, তারা অত্যাচারিত ও বিতাড়িত। বাংলাদেশের এই উদার মানবিক নীতির কথা যদি কূটনীতিকেরা বিশ্ববাসীকে বোঝাতে সমর্থ হন, তাহলে এর সমাধান হবে একভাবে, তা না হলে বিষয়টি ঝুলে যাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আহা আহা করবে, ত্রাণসামগ্রী দেবে, কাজের কাজ কিছু হবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কূটনীতিকদের জন্য রোহিঙ্গা সংকট এক অগ্নিপরীক্ষা।