দখলে নিয়ে নদে মাছ চাষ মেয়রের

Slider ঢাকা

a32d468d3cada6874423508da4fe5cf1-59ec31e312352

 

 

 

 

 

 

 

তিনি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। ইজারা না নিয়েই পৌর কার্যালয়ের সামনে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে মাছ চাষ করছেন। সেখানে মাছ ধরতে গেলে মারধর করেন জেলেদের। এ কারণে দুই শতাধিক জেলে পরিবার বিপাকে পড়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদটি একজনের দখলে থাকায় এবার সেখানে মাছের পোনাও ছাড়া যায়নি। শুনেছি, যে সরকার যখন ছিল, সে দলের লোকজন নদটিতে মাছ চাষ করেছেন। তবে কোনো জেলেই এ বিষয়ে অভিযোগ দেননি।’
জেলেরা বলেন, দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের সামনেই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। এটি প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। নির্বাচিত হওয়ার পর দুই বছর ধরে পৌর মেয়র মো. শাহনেওয়াজ শাহান শাহ্ নদটি দখল করে মাছ চাষ করছেন। এ কারণে দুই শতাধিক জেলের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। মাছ ধরতে না পারায় পরিবারের লোকজন নিয়ে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মাছ ধরতে গিয়ে মারধরের শিকারও হয়েছেন জেলেরা। এখন ভয়ে প্রতিবাদও করার সাহস পান না কেউ।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতিদিন মেয়র নদটি থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন। এতে মাসে ৬ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। বছরে দাঁড়ায় ৭২ লাখ টাকা। দুই বছর ধরে অবৈধভাবে মাছ ধরে বিক্রি করলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এটি ইজারাও দেওয়া হয়নি।
মেয়র মো. শাহনেওয়াজ শাহান শাহ্ ইজারা না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘পৌরসভার ভেতরে যত সরকারি খাল, বিল ও নদী রয়েছে, বেকারদের জন্য এসব জলাধার চিহ্নিত করে মাছ চাষ করার নির্দেশ রয়েছে সরকারের। এ কারণে নদে মাছ চাষ করা হচ্ছে।’ আপনি তো বেকার নন? এর জবাবে তিনি বলেন, এর সঙ্গে অনেক বেকার লোকজন আছে। তিনি দাবি করেন, নদে জেলেরা মাছ ধরতে গেলে মারধর করা হয় না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুল মজিদ বলেন, সরকারি কোনো উন্মুক্ত নদ ও খাল ইজারা দেওয়া না থাকলে ‘জাল যার জলা তার’। এভাবে নদটি দখল করে একজন ব্যক্তির মাছ চাষ অন্যায়। নদটি উন্মুক্ত করার জন্য বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

69fc8293bfcea3a57dc37b9af01e26c8-59ec31e319e99

 

 

 

 

১২ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার সামনেই নদটির অবস্থান। মাছ চাষের জন্য নদের পূর্ব পাশ দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কোথাও মাছ ধরতে কোনো জেলে নেই। আগে সেখানে মাছ ধরতেন এমন কয়েকজনকে বাড়িতে গিয়ে খুঁজে পাওয়া গেল। মেয়রের ভয়ে তাঁরা প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, নদে ট্যাংরা, পুঁটি, দাড়কিনি, পাবদা, বোয়াল, বাইন, শোল, গজার, টাকি, কালবাউশ, করতিসহ নানা প্রজাতির মাছ রয়েছে। এখানে মাছ ধরে দুই শতাধিক জেলে পরিবারসহ আশপাশের অনেক মানুষ সংসার চালাতেন। মো. শাহনেওয়াজ শাহান শাহ্ মেয়র হওয়ার পরই সেখানে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধের ঘোষণা দেন। প্রথম দিকে কিছু জেলে মাছ ধরতে গেলেও মেয়রের লোকজনের মারধরের শিকার হন। সব সময় নদের আশপাশে মেয়রের লোকজন থাকেন। প্রতিদিন মেয়র মাছ ধরে বিক্রি করছেন। এভাবে প্রতিদিন মাছ ধরে বিক্রি করলেও প্রশাসনের লোকজন বাধা দেন না।
ঝালুরপাড়া এলাকার এক জেলে বলেন, ‘গত আগস্টে একদিন অভাবের তাড়নায় নদে লুকিয়ে মাছ ধরতে যাই। কিছু মাছ ধরতেই মেয়রের লোকজন আমাকে আটকায়। খবর পেয়ে মেয়র এসে নিজে আমাকে মারধর করেন। এরপর থেকে নদে আর কোনো দিন মাছ ধরতে যাইনি।’
অপর এক জেলে বলেন, ‘নদে আমাদের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। অন্য কোনো স্থানে মাছ ধরে সংসার চালাব, সেটাও পারছি না। ওই নদ থেকে মেয়রকে মাছ ধরে দিতে হয়। সারা দিন ১ হাজার টাকার মাছ মারলে আমাদের ১০০ টাকা দেন। এতে সংসার চলে না। মেয়রের কথামতো মাছ না মেরে দিলে মারধর ও হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। অনেক সময় মেয়র নিজে বাড়িতে এসে জোর করে নদে মাছ ধরিয়ে বিক্রি করেন। মেয়রকে নিয়ে আমরা বেকায়দায় রয়েছি। এসব বিষয়ে কোথাও অভিযোগ দেওয়া তো দূরের কথা, প্রতিবাদ করার সাহস কেউ পান না।’
মাঝিপাড়ায় গেলেও মেয়রের ভয়ে কোনো জেলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
সাবেক মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর নদটি উন্মুক্ত করে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি (বর্তমান মেয়র) নির্বাচিত হওয়ার পর নদটি দখলে নেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারি উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ বিক্রি করে আসছেন। তিনি পূর্ব দিকে নদ ভরাট করছেন।’
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, মেয়র অন্যায়ভাবে বিশাল নদটি দখল করে মাছ চাষ করে আসছেন। এটাও দুর্নীতি। এতে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের মাছ আহরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবছর তিনি প্রায় কোটি টাকার মাছ বিক্রি করে থাকেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন নদটি উন্মুক্ত না করলে, সব জেলেকে নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বলেন, ‘নদটি দখলের বিষয়টি শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *