‘আপনি কে, এই সিনেমাকে নেগেটিভ বলছেন’

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

e35891067e9ac129959f4239c3245c86-59e88eb985737

 

 

 

 

রখ্যাত চলচ্চিত্রকার এবং গায়ক ও সংগীত পরিচালক খান আতাউর রহমানকে রাজাকার বলে মন্তব্য করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষেরা। সেখানে খান আতার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংগীতশিল্পী রুমানা ইসলাম ও আগুন উপস্থিত ছিলেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) কার্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে ‘কিছু দুঃখের কথা বলবো’ শিরোনামে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার। সেখানে খান আতাউর রহমানকে রাজাকার বলার জন্য তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বক্তরা নাসির উদ্দীন ইউসুফের বিচার চেয়েছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের এক অনুষ্ঠানে খান আতাউর রহমানকে রাজাকার বলে মন্তব্য করেন চলচ্চিত্রকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ। এরপর চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট অনেকেই নাসির উদ্দীন ইউসুফের এমন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক ফারুক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৭৩ সালে খান আতা পরিচালিত “আবার তোরা মানুষ হ” সিনেমাটি মুক্তি পায়। তখন সেন্সর বোর্ড এই সিনেমার ছাড়পত্র দিয়েছিল। ১১ জন সেক্টর কমান্ডার আর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে এই সিনেমা দেখেছেন। স্বাধীনতার পক্ষের সরকার এই সিনেমার সেন্সর ছাড়পত্র দিয়েছে। আপনি কে, এই সিনেমাকে নেগেটিভ বলছেন। আপনি স্বাধীনতার পক্ষের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ, এটা মানতে পারি না। আমরা এর বিচার চাই।’
বক্তব্যের একেবারে শেষ পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফারুক। তিনি বলেন, ‘আপনি ( নাসির উদ্দীন ইউসুফ) কোন অধিকারে খান আতা সাহেবকে রাজাকার বলছেন? রাজাকার কারা? আমরা জানি, রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়ি বাড়ি আগুন দিয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে বিচার চাই। কারণ, ১৯৭৩ সালে এই সরকারই ক্ষমতায় ছিল।’
নাসির উদ্দীন ইউসুফকে উদ্দেশ করে অভিনেতা ফারুক বলেন, ‘সবকিছুর ঊর্ধ্বে, আইনের ঊর্ধ্বে আপনি কোত্থেকে এসেছেন! আপনার আর কী পরিচয় আমরা জানতে চাই। আমি বিচার চাই, এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বিচার চাই।’
খান আতাউর রহমানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল গুণী নির্মাতা আমজাদ হোসেনের। তিনিও তাঁর বক্তব্যের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। বললেন, ‘নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, তুমি তো আমার ভাই। একজন মুক্তিযোদ্ধা। কেন এই ঢিলটা মারলে। দশ বছর আগে আতা ভাই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তোমাদের তো কোনো ক্ষতি তিনি করেননি। এত বছর পর তাঁকে নিয়ে এমন কথা কেন বললে! আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনে ঢোকার আগে এমন মন্তব্যের জন্য বাংলার মানুষের কাছে তোমাকে ক্ষমা চাইতেই হবে।’
আমজাদ হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি, চলচ্চিত্রের মানুষকে ভালোবাসি। তাই এমন একটা ঘটনার পর আমরা সবাই মিলে আলোচনা করলাম, অন্তত আতা ভাইয়ের ছবিটা (আবার তোরা মানুষ হ) দেখাই। আজকে যে সভা হচ্ছে, তা প্রমাণ করে চলচ্চিত্রের লোকেরা জেগে আছেন। সবাই এর প্রতিকার চাচ্ছেন।’
পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘খান আতা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝুঁকি নিয়েও বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করেছেন। তো পাকিস্তানিদের হুমকি মাথায় নিয়েও যিনি কাজ করেছেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার? খান আতা ছিলেন, আছেন, থাকবেন।’
‘কিছু দুঃখের কথা বলবো’ শিরোনামে এই প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তাদের সবাই চলচ্চিত্র ও সমাজগঠনে খান আতাউর রহমানের অবদান তুলে ধরেন। অনেক সময় তাঁদের কথায় ক্ষোভও উঠে আসে। ফারুক ও আমাজাদ হোসেন ছাড়া প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন সিবি জামান, আজিজুর রহমান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, খান আতার পরিবারের পক্ষে সংগীতশিল্পী রুমানা ইসলাম, আগুনসহ আরও অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *