পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বন্যা–পরবর্তী সংস্কারকাজ নিয়ে লুটপাট হতে পারে, তবে হরিলুট হবে না। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বন্যা-২০১৭ : ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ও বন্যা–পরবর্তী ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
ওই অনুষ্ঠানে বন্যার কারণে দেশের বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ও বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—এমন তথ্য তুলে ধরেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও বাঁধ মেরামতে হরিলুট হতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারকে সাবধান হতে হবে। এসব সংস্কারকাজে সাংসদদের দূরে রাখতে হবে। স্থানীয় জনগণকে কাছে রাখতে হবে ও সম্পৃক্ত করতে হবে।
আইনুন নিশাতের এসব অভিযোগের জবাবে সংলাপে উপস্থিত পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘বন্যা–পরবর্তী সংস্কারকাজ নিয়ে লুটপাট হতে পারে, তবে হরিলুট হবে বলে আমি মনে করি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে কোনো দুর্নীতি হয় না—এমন কথা আমি বলব না। কিন্তু দুর্নীতির কারণে বাঁধ ভেঙে বন্যা হয়েছে, এটা আমি মানতে রাজি না।’
দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কারণে বন্যা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মূলত বাংলাদেশের উজানে স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম বৃষ্টি হওয়ায় বন্যার পানি বাঁধ উপচে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। হাওরে বাঁধ উপচে পানি ঢোকার পাশাপাশি ৫০০টি স্থানে কৃষক বাঁধ কেটে দেওয়ায় সেখান দিয়েও পানি ঢুকেছে। আর দিনাজপুরে বাঁধের ওপরে একটি ফুলগাছ ছিল। সেটি ভেঙে গিয়ে ওই ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে বন্যা হয়েছে। দেশের অনেক এলাকায় ইঁদুর এসে বাঁধ ফুটো করে দেওয়ায় সেখান দিয়ে পানি ঢুকেছে।
সংলাপে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু বন্যা–পরবর্তী সংস্কারকাজে সাংসদদের দূরে রাখার বিষয়ে অধ্যাপক আইনুন নিশাতের পরামর্শের সমালোচনা করে বলেন, ‘সাংসদেরা জনপ্রতিনিধি। তাঁরা এলাকার উন্নয়নের কাজে সব সময় সম্পৃক্ত থাকেন। বন্যা–পরবর্তী কাজে তাঁদের দূরে রাখা হবে কেন, তা আমি বুঝতে পারছি না।’
সংলাপে সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ইঁদুরে বাঁধ কাটার কারণে, নাকি মেরামত ত্রুটির কারণে বাঁধ ভেঙে বন্যা হলো—তা ভেবে দেখার জন্য পানিসম্পদমন্ত্রীকে আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বিশেষ ফেলো এম আসাদুজ্জামান বলেন, দেশে বড় অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহ বেশি। কিন্তু তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায় না।
সিপিডি আয়োজিত এ সংলাপে দেশের বন্যা, দুর্যোগ ও পানিবিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। তাঁরা বন্যা–পরবর্তী পুনর্বাসনকাজে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো শুষ্ক মৌসুমে মেরামত করার পরামর্শ দেন তাঁরা।