শীত-বর্ষা-গরমে, কষ্ট উঠে চরমে

Slider জাতীয়

cfea415fb286bfadb52394ae7c772499-59e5686f69747

 

 

 

 

একটু বৃষ্টিতেই জমে হাঁটুপানি। ভারী বৃষ্টিতে সেই পানি বেড়ে কোমরসমান। তখন পারাপারের একমাত্র অবলম্বন রিকশাতেও বসে থাকা দায়। অমানুষের মতো নোংরা পানি এড়াতে পা দিতে হয় রিকশাওয়ালার সিটে। এত গেল বর্ষার বিড়ম্বনা।

বর্ষা শেষে হাঁফ ছাড়তে না ছাড়তেই শুরু হয় গ্যাসের কষ্ট। সকালে রান্না ওঠে না চুলায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিভে যেতে থাকে গ্যাসের দেখা পাওয়ার আশা। রাতে গ্যাস এলে মনে হয় আকাশের চাঁদ! গ্যাস না থাকলে রান্নার অভাবে পূর্ণিমার চাঁদকে মনে হয় ঝলসানো রুটি।

শীত শেষ হয়। হয় না কষ্টের শেষ। গ্যাস এলেও চলে যায় পানি। এমনিতেই এই এলাকায় বেশির ভাগ বাড়িতে সারা দিন কলে পানি থাকে না। তিনবেলা লাইনে পানি আসে। তখন পানি জমা করে রাখতে হয়। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে পানির কষ্ট। মাঝে মাঝে তিন দিনও পানির সাপ্লাই থাকে না।

এসব নিয়েই বসবাস ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকার বাসিন্দাদের। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের পেছনের গেটের উল্টোদিক দিয়ে সোজা উত্তর দিকে চলে গেছে একটি রাস্তা। আপাতদৃষ্টিতে ছিমছাম আবাসিক এলাকা মনে হতে পারে। তবে ভেতরের দৃশ্যটা আলাদা। এই সড়কে আছে বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন। দোকানপাট, মসজিদ, খাবারের দোকান, এমনকি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও। আছে অত্যাধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট। বস্তিও রয়েছে দুটি। তবে বস্তি বা ফ্ল্যাটের বাসিন্দা শান্তি নেই কারও মনে।

এই এলাকায় যারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে বলাই বাহুল্য তাদের ধৈর্যের সীমা নেই। কারণ বর্ষাকালে রাস্তার জলাবদ্ধতার কারণে তারা আবর্জনায় ভরা নদী পাড়ি দেয়। গ্রীষ্মকালে বালতির পর বালতি পানি টেনে আনে আর শীতকালে শুকনো খাবার অথবা হোটেলে খেয়ে দিন কাটায়। ৭/৮ বছর ধরে এই এলাকায় ভাড়া থাকেন, রমজান আলী। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। অফিস ও মেয়ের স্কুল কাছে হওয়ায় হাজার ঝক্কিঝামেলা সহ্য করে এখানেই থাকেন। মজার ছলে বললেন, ভাই ‘এখন ভাবি বর্ষাকালে পানিভর্তি সড়কে রিকশা বা ভ্যানে উঠে নৌকার মজা পাওয়া যায়। আর গরমে পানি টানতে টানতে ব্যায়াম হয়ে যায়। শীতেও ধরেন গ্যাসের অভাবের অছিলায় হোটেলে খাওয়ার মজা পাওয়া যায়।’

এই এলাকার আরেক বাসিন্দা রহিমা খাতুন। জানালেন,৬ / ৭ বছর ধরে এখানে ভাড়া আছেন। মেয়ের স্কুল ও স্বামীর কর্মস্থল কাছে হওয়ায় দূরে যান না। কিন্তু আর পারছেন না। গরমকালে দিনে একবার পানি থাকে তো দুইবার থাকে না। শীতকালে এমনও হয় তিনবার হোটেল গিয়ে খেতে হয়। আর বর্ষাকালে মনে হয় গাড়ি না কিনে নৌকা কিনলে ভালো করতেন।

cfd0dffb096c0e3b825681ab74275151-59e5686f5e876

 

 

 

 

পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকার মুদি দোকানি কেরামত। বললেন, বর্ষাকালে এখানে দোকান খোলাই মুশকিল। বর্ষা কেন যেকোনো সময় একটু বৃষ্টিতেই রাস্তায় জমে হাঁটুপানি। সেই পানি নামতে সারা দিনও লেগে যায়। এতে কেনাবেচা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দোকানে রাখা চাল, ডাল, আলু, মুড়িও পানিতে নষ্ট হয়।

স্বপন ট্রেডার্স নামে ওষুধের দোকানি স্বপন জানালেন, দোকানে পানি উঠে ওষুধ ভিজে নষ্ট হয়। অতিষ্ঠ হয়ে কদিন আগে দোকান উঁচু করেছেন। তাতেও বেশি পানি জমলে রক্ষা পাওয়া যায় না।

বস্তিতে থাকেন জমিলা বেগম। এই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। বললেন, বর্ষায় কোমরপানি পার হয়ে কাজে যেতে হয়। গরমে পানি না থাকলেও কাজ করতে সমস্যা হয়। আর শীতে তো গ্যাস যখন আসে দিন নেই রাত নেই তখন কাজে যেতে হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও আশার কোনো বাণী শোনা যায়নি। তিতাসের জরুরি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডিজিএম ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সেলিম বলেন, গ্যাস সংযোগের নেটওয়ার্ক আপগ্রেড না হওয়ার কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়। লাইনে গ্যাসের সাপ্লাই না থাকার কারণেও এমন সমস্যা হয়। এলাকাবাসী দরখাস্ত দিলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে গেলে এই সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি তোলা যেতে পারে। যেসব এলাকায় এ রকম সমস্যা সেগুলো সমাধানে ওয়াসা সচেষ্ট আছে। ময়লা নিষ্কাশনে সমস্যার কারণে জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করলে সমস্যার কারণ খুঁজে সমাধান করা সম্ভব।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম আহসানের মুঠোফোনে ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী মো. আলমগীরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *