মঞ্চে কোনো এক নেতাকে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে আরেক নেতার অনুসারীরা তাঁদের নেতাকে ডাকার জন্য আওয়াজ তুলছেন। কোনো নেতা আবার তাঁর নাম ঠিকমতো উচ্চারণ না করায় প্রতিবাদ করছেন। অনুষ্ঠান আয়োজনে নিজেদের পরিশ্রমের কথা উল্লেখ না করায় হম্বিতম্বি করছেন কোনো কোনো কর্মী।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামের আজ সোমবার বিকেলের চিত্র এটি। বিচার বিভাগের ‘স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার’ দাবিতে আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়নে রাজধানীর চারটি বারের নেতারা মিলিত হয়েছিলেন এখানে। মঞ্চে কোন নেতাকে ডাকা হবে তা নিয়ে আইনজীবীদের এ হুলুস্থুল কাণ্ড দেখে একপর্যায়ে সভার সভাপতি অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করতেও উদ্যত হলেন। তবে শেষমেশ প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার মতবিনিময় সভা শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করলেন তাঁরা।
বিকেল চারটায় পূর্বনির্ধারিত সময় থাকলেও অনুষ্ঠান শুরু হয় সাড়ে চারটারও কিছু পরে। অনুষ্ঠানের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম মাহবুব উদ্দীন খোকন সভা আয়োজনে ‘পরিশ্রম’ করেছেন এমন তিনজন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করেন। সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের সামনে থাকা আইনজীবী গাজী কামরুল ইসলাম সজল এর প্রতিবাদ করেন। তিনি বলে ওঠেন, ‘নাম উল্লেখ করলে সবার উল্লেখ করেন। শুধু তিনজনের কেন।’
মাহবুব উদ্দীন খোকন এরপর সভা সঞ্চালনা করা এবং নেতাদের মঞ্চে ডাকার জন্য আইনজীবী শামীমা সুলতানাকে দায়িত্ব দেন। সভায় অংশ নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট বার, ঢাকা বার, ঢাকা ট্যাক্সেস বার এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন বারের সাবেক ও বর্তমান নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শামীমা যখন কোনো একটি বারের কোনো নেতাকে মঞ্চে ডাকছিলেন, তখন অন্য বারের নেতাদের অনুসারীরা তাঁদের নেতার নাম ডাকার জন্য আওয়াজ তুলছিলেন। প্রতিটি নাম ডাকার পরই সভাস্থলজুড়ে শোরগোল হচ্ছিল।
এমন পরিস্থিতি শরীফ ইউ আহমেদ নামের এক আইনজীবী মঞ্চের নিচ থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনাকারীকে সহায়তা করার জন্য ওপরে ওঠেন। এ সময় সামনের শ্রোতাদের প্রথম সারি থেকে আবদুল্লাহ আল মাহবুব নামে আরেক আইনজীবী তাঁকে নেমে আসার জন্য উচ্চ স্বরে ডাকতে থাকেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কিছুক্ষণ বাগ্বিতণ্ডা হয়। আইনজীবী সমিতির নেতারা ততক্ষণে মঞ্চে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের সামনেই এমনটা চলতে থাকে।
নাম ডাকাডাকি নিয়ে এমন শোরগোল শেষ হতে না-হতেই শুরু হয় আরেক পর্ব। বক্তব্য দিতে এসে কয়েকজন সব দলের আইনজীবীদের একত্রিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় নেতাদের দোষারোপ করতে থাকেন। সভার সভাপতি জয়নুল আবেদীন আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে শুধু সুপারিশ করার জন্য আহ্বান জানান আইনজীবীদের। কিন্তু তা না মানায় একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। সভাস্থল ত্যাগ করার হুমকিও দেন। চেয়ার থেকেও উঠে যান। তখন অন্য নেতারা এসে তাঁকে শান্ত করেন। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।