এএফপিকে: ভারতে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ‘পুশইন’ (ঠেলে পাঠানো) করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ তথ্য দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের এক সীমান্তরক্ষী। তিনি বলেছেন, স্থানীয়দের সক্রিয় সমর্থন নিয়ে আমরা আমাদের কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ঠেলে বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে এমন আশংকা করছেন তারা। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে টহল। ভারতের সীমান্তরক্ষীদের দেয়া তথ্য অনুসারে, ওই অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার নির্দেশনা পেয়েছেন তারা। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের ওই অঞ্চলের এক কমান্ডার তরিকুল হাকিম এ বিষয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পুটখালি পোস্টের বিপরীতে রোহিঙ্গাদের জড়ো হতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ভারত যেন রোহিঙ্গাদের আমাদের এখানে ঠেলে না পাঠাতে পারে সেজন্যে আমরা আমাদের নজরদারী ও টহল বাড়িয়ে দিয়েছি।
ভারতে বর্তমানে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। কিন্তু ভারত সরকার তাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। গতমাসে, ভারতের একটি শীর্ষ আদালতে এ বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, রোহিঙ্গারা ভারতের জন্যে হুমকিস্বরূপ। হাকিম বলেন, ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা হয়তো বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে চায়। উল্লেখ্য, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আনুমানিক ৫ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ রাখাইনে সামরিক বাহিনীর চালানো নৃশংসতাকে ‘জাতি নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে পশ্চিমবঙ্গের এক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী এএফপিকে বলেছে, আগে সীমান্তরক্ষিরা কোন রোহিঙ্গার খোঁজ পেলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিত। তবে এখন অবস্থা ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানোর পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের সক্রিয় সমর্থন নিয়ে আমরা আমাদের কাজ সমপন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ এদিকে, বিজিবির এক কর্মকর্তা আবদুল হোসেন বলেছেন, ‘সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোতে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এসব এলাকায় নতুন আসা রোহিঙ্গারা বলেছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা তাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে উৎসাহিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমরা দিন-রাত সবসময় টহল চালিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয় গ্রামবাসীরাও আমাদের সঙ্গে টহল দিচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তদিয়ে বাংলাদেশে এসেছে এক ডজনেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ভাষ্যমতে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা তাদের জন্য সীমান্তের কাটাতারের এক অংশ খুলে দিয়েছে। যাতে করে তারা সহজে বাংলাদেশে আসতে পারে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই কমপক্ষে ৮ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এই বিশাল সংখ্যার মানুষ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ত্রাণ সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকার। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তার মধ্যে নতুন করে ভারতের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের আগমন বাংলাদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।