টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে রুপা খাতুনকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। আজ রোববার সন্ধ্যায় জমা দেওয়া ওই অভিযোগপত্রে পাঁচ পরিবহনশ্রমিককে অভিযুক্ত করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ৪০তম দিনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুপুরের অরনখোলা ফাঁড়ির পরিদর্শক কাইয়ুম খান সিদ্দিকী টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম অভিযোগপত্র জমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ছোঁয়া পরিবহনের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা, লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে পুলিশ, চিকিৎসকসহ পাঁচ-ছয়জন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন।
মামলার আলামত হিসেবে ছোঁয়া পরিবহন বাস, রুপার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, চশমা, রক্তমাখা পোশাকের কথা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপা খাতুনকে চলন্ত বাসে পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্ষণ করেন। পরে তাঁকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যান। পুলিশ ওই রাতেই তাঁর লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
রুপাকে হত্যার পর ময়মনসিংহ-বগুড়া রুটে চলাচলকারী ছোঁয়া পরিবহনের শ্রমিকেরা স্বাভাবিক ছিলেন। ঘটনার পরদিন থেকেই তাঁরা স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। রুপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে রুপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর, সুপারভাইজার সফর আলী এবং সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের কাছে তারা রুপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা সবাই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে আছেন। ৩১ আগস্ট রুপার লাশ উত্তোলন করে তাঁর ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাঁকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নিজ গ্রাম আসানবাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
গত ১২ সেপ্টেম্বর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সাইফুর রহমান খান ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মাথায় আঘাতের কারণে রুপার মৃত্যু হয় এবং মৃত্যু আগে রুপাকে ধর্ষণ করা হয়।