৩৪তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সময় লেগেছিল তিন বছর চার মাস। ৩৫তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয় দুই বছর আট মাসে। নিকট অতীতের (৩৩তম বিসিএস থেকে) প্রতিটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চাকরিতে যোগদানের গেজেট প্রকাশে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে পিএসসি।
পিএসসির দীর্ঘসূত্রতার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে ৩৬তম ও ৩৭তম বিসিএসের ক্ষেত্রেও। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাড়ে চার মাস হয়ে গেলেও এখনো ৩৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল বেরোয়নি। আবার লিখিত পরীক্ষার পাঁচ মাস পরেও ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেনি পিএসসি।
দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিসিএস চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষোভ আর হতাশা দিনে দিনে বাড়ছে। ৩৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত এবং ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন এমন অন্তত ২০ জন প্রার্থী গত কয়েক দিনে প্রথম আলোকে তাঁদের হতাশার কথা জানিয়েছেন।
বর্তমানে একটি বিসিএসের প্রক্রিয়া শেষ করতে আড়াই থেকে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক ২০১৬ সালের এপ্রিলে নিয়োগ পাওয়ার পর একাধিকবার বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। তবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
একটা বিসিএসের জন্য কোনোভাবেই এক-দেড় বছরের বেশি সময় লাগা উচিত নয় এমন মনে করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনা জরুরি। বাংলাদেশের মেধাবী তরুণদের জীবনের একটা বড় সময় চলে যাচ্ছে বিসিএস পরীক্ষার পেছনে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি (প্রাথমিক বাছাই), লিখিত ও চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের সময়সূচি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৯তম বিসিএসে সময় লাগে দুই বছর এক মাস। ৩০তম বিসিএসে লাগে মাত্র এক বছর আট মাস। এর পরের বিসিএস দুটির নিয়োগ প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শেষ হয়। ৩১তম বিসিএসে দেড় বছর আর ৩২তম বিশেষ বিসিএসে এক বছর এক মাস সময় লাগে। কিন্তু ৩৩তম বিসিএস থেকে প্রক্রিয়াগত সময় বাড়ছে। ৩৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থীরা চাকরিতে যোগ দেন ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট। সময় লাগে দুই বছর পাঁচ মাস।
২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৩৪তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ২০১৬ সালের ১ জুন চাকরিতে যোগ দেন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে সময় লেগেছে প্রায় ৩ বছর ৪ মাস।
৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় দুই বছর লাগার পর ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। গেজেট প্রকাশ করা হয় ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল। উত্তীর্ণ প্রার্থীরা চাকরিতে যোগ দেন চলতি বছরের ২ মে। সময় লেগেছে দুই বছর আট মাস।
চূড়ান্ত ফলের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা
২০১৫ সালের ৩১ মে ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী এতে অংশ নিয়ে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন মাত্র ১৩ হাজার ৬৭৯ জন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁদের লিখিত পরীক্ষা হয়। আর মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয় ৭ জুন।
৩৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলের অপেক্ষায় থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রার্থী বলেন, ‘প্রতি মাসের শুরুতে পিএসসি বলে, চলতি মাসের শেষে ফল প্রকাশ করা হবে। মাসের শেষে বলে, আগামী মাসের শুরুতে। এভাবে চার মাস পার হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির পর থেকে ইতিমধ্যে ২ বছর ৫ মাস চলে গেছে। মৌখিক পরীক্ষার ফলের পর পুলিশি যাচাইয়ে (ভেরিফিকেশন) লাগবে আরও কয়েক মাস।’
প্রায় একই অবস্থা ৩৭তম বিসিএসের প্রার্থীদের। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। চলতি বছরের ২৩ মে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস পার হলেও ফল প্রকাশ করা হয়নি। পিএসসি সূত্র জানায়, ৩৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল এবং ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল বের হবে চলতি মাসের যেকোনো দিন। ফল প্রকাশ ও নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে কথা বলতে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।