বখাটেরা বাড়িতে ঢুকে মারধর করছিল স্কুলছাত্রী শামসুন নাহার চাঁদনীর বাবা মো. রবিউল ইসলামকে। বাবাকে হেনস্তার এই দৃশ্য দেখে আত্মহত্যা করেছে মেয়ে। গতকাল শুক্রবার রাতে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হরিণটানা এলাকার দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খুলনা নগরের সরকারি করনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল শামসুন নাহার চাঁদনী (১২)। তার বাবা মো. রবিউল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল চাঁদনী।
রবিউল ইসলাম বর্তমানে এক্সিম ব্যাংকের যশোর শাখায় কর্মরত আছেন। চাঁদনীর বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তার ভাই ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। বাড়িতে মূলত থাকতেন চাঁদনী ও তার মা ফিরোজা পারভীন। প্রতি শুক্রবার বাড়িতে আসতেন বাবা রবিউল।
এলাকাবাসী ও চাঁদনীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে চাঁদনীকে উত্ত্যক্ত করছিল হরিণটানা মধ্যপাড়া এলাকার শাহ আলমের ছেলে শুভ। সে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। চাঁদনীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল সে। এ ঘটনা মাকে জানিয়েছিল চাঁদনী। এরপর রবিউল শুভর বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে ঘটনাটি জানান। তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত না করার অনুরোধ করেছিলেন তিনি।
গতকাল বিকেলে যশোর থেকে বাড়িতে আসেন রবিউল। সন্ধ্যার দিকে শুভ আরও কয়েকজনকে নিয়ে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে। কিছুক্ষণ পর মাফিয়া কবির নামের এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুভর বাবা চাঁদনীদের বাড়ি যান। সঙ্গে শুভ ও তার সঙ্গীরাও ছিল। এ সময় মাফিয়া কবির রবিউলকে বলেন যে চাঁদনীর সঙ্গে শুভর প্রেমের সম্পর্ক আছে।
রবিউলের অভিযোগ, চাঁদনী প্রেমের সম্পর্ক অস্বীকার করার সঙ্গে সঙ্গে মাফিয়া মেয়ের গালে থাপ্পড় মারেন। এর প্রতিবাদ করলে শুভ ও তার সঙ্গীরা লাঠি ও লোহার রড দিয়ে রবিউলকে মারধর শুরু করে। এ ঘটনা দেখে চাঁদনী ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয় এবং গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। চাঁদনীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে তার মা চিৎকার করে উঠলে শুভ ও তার সঙ্গীরা পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুভর বিরুদ্ধে ওই এলাকায় আরও অনেক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে মধ্যপাড়া এলাকার দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করায় এলাকায় তাকে নিয়ে সালিস হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্ত্যক্তের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করে বলেন, ওই এলাকায় আসার পর থেকেই শুভ তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল। পরে সালিস ডেকে শুভকে সতর্ক করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর শুভদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেই বাড়ির ভাড়াটিয়া মাছুরা বেগম বলেন, শুক্রবার রাত নয়টার দিকে শুভর মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে কাউকে না পেয়ে বাড়িতে তালা লাগিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে মাফিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে শুভর বিরুদ্ধে আগে কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানান তিনি।