জীবনে ডিম খায়নি, এমন মানুষ খুঁজে বের করুন দেখি! হাতড়ে হাতড়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর মেরুতে চলে যান, পাবেন না একজনও। ডিম আসলে এমন এক জিনিস, আপনি পরিত্যাগ করতে চাইলেও ওটি আপনাকে ছাড়বে না।
আপনার রোগা-পটকা দেহ। চলতে গেলে ঠ্যাং কাঁপে, কী হয়—দেখুন। ঘরের মানুষ আপনার সামনে রোজই একটা ডিম হাজির করবে। তা হতে পারে সেদ্ধ বা ভাজা। পাড়ার ছেলেরা অকৃত্রিম আন্তরিকতা নিয়ে বলবে, ‘ভাইয়া, ডিম খান!’ আর চিকিৎসকের কাছে গেলে তো কথাই নেই। হাফ বা ফুল বয়েলড ডিম—পথ্যতালিকায় আবশ্যক হয়ে যাবে।
ডিম যে কেবল খাবার হিসেবেই উপাদেয়, তা নয়। ডিমের অন্য ব্যবহারও কম নয়। মঞ্চে উঠে কেউ হেঁড়ে গলায় গান ধরুক না কেন, পচা ডিম কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পাবে। মঞ্চের পচা ডিম তবু পিঠে পড়ে, কিন্তু অলিগলিতে থাকা বেকারি আর কেক-বিস্কুটের কারখানার অকৃপণ ব্যবহারে কত যে পচা ডিম অজান্তেই পেটে যাচ্ছে, তার হিসাব কে রাখে?
জীবনে সাফল্য লাভে ‘ডিম পড়া’ কত বড় মোক্ষম দাওয়াই, তা ‘বাবা’ কিসিমের সাধকমাত্রই জানেন। এ জন্যই তো ‘ডিমপড়া’ মন্ত্রে ভক্তের ভবিষ্যৎ ঝরঝরে করে দিয়ে নিজের আখেরটা গুছিয়ে নিতে কোনো কসুর নেই।
ডিম নেই কোনখানে? ছেলে বা মেয়েটার অঙ্ক পরীক্ষা, মা কিছুতেই সেদিন তাকে ডিম খেতে দেবেন না। আরে, ডিম খেলে পরীক্ষায় ‘ডিম্ব’ জুটবে যে! সব মা-ই যে এমন, তা নয়। আবার কেউ অকর্মা বসে থাকলেও আন্ডা তাকে বিড়ম্বনার ঝান্ডা দেখিয়ে ছাড়বে। নানাজনের মুখে শুনতে হবে, ‘অকর্মা ধামড়া একটা! কোনো কাজ নেই, বসে বসে আন্ডা ভাজছে!’
আন্ডা নেই কোনখানে? চুল ঝরে যাচ্ছে, পুষ্টি নেই। আন্ডা ভেঙে মাথায় মেখে বসে থাকো। পুড়ে গেছে, জ্বলছে। ঠান্ডা হতে ক্ষতে আন্ডা মাখো।
তা—ডিম মুখেই তুলুন বা অন্যভাবে কাজে লাগান, ডিম ছাড়া জীবন অচল। আরে, দুর্মূল্যর বাজারে ডিম ছাড়া সস্তায় আমিষ কোথায়? এটি না হলে যখন চলছেই না, তখন ডিম দিবসে ১২ টাকা হালি করে পাওয়ার সুযোগটা সবাই ছাড়বে কেন?
কেউ বালতি, কেউ ডিমের খাঁচি কেউ বা কাগজের কার্টন নিয়ে হাজির। একেকজন ৯০টা করে ডিম পাবে বলেছে। এ জন্যই তো সেই কাকডাকা ভোর থেকে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে লাইন। নানা বয়সী নানা শ্রেণির মানুষ। একসঙ্গে সবাই পেতে অস্থির—ডিম চাই, ডিম চাই! পার পিস এগ মাত্র তিন টাকা—ভাবা যায়?
আয়োজক দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের চোখ কপালে। তাঁরা মাত্র লাখ খানেক ডিম দেবেন ভেবেছেন। এখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে হাজার হাজার লোক। একসঙ্গে এত মানুষকে ডিম দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা। আগে জানলে হয়তো লাখ খানেক ডিম্ববতী মুরগি এনে বসিয়ে দিয়ে নগদে সংকট উতরানো যেত। কিন্তু তাঁরা কি ভেবেছেন ডিমের জন্য এত মানুষ পাগলপারা! ঝটপট বরাদ্দ কাটছাঁট হলো। জনপ্রতি ৯০টা নেমে এল ২০টায়। এতেও কি সমাধান মেলে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন হল থেকে এসেছেন ৪৫ জন। একজন তো বলেই ফেললেন, ব্যাচেলর লাইফে ডিমই তো সব। এক বেচারা সেই ভোর থেকে দাঁড়িয়ে। নিরাশ হতে হতে সবচেয়ে বড় বিদ্যাটাই অ্যাপ্লাই করলেন। হাতটানে বাগালেন তিনটা ডিম। এতেও যদি কিঞ্চিৎ স্বস্তি মেলে! কিন্তু স্বস্তি কি আসলে মিলেছে? ডিমের জন্য লাইনে দাঁড়ানো মানুষেল হইচই-হট্টগোল থেকে বিশাল ডামাডোল। হুড়োহুড়িতে ডিমের মঞ্চ মড়াৎ! ডিমের কিছু খাঁচি শেষ। এ সময় পুলিশ বসে থাকে কী করে? ব্যস, হয়ে গেল একচোট। আন্ডা নিতে এসে খেতে হলো ডান্ডা! আমাদের কপালে এ আর নতুন কী!