উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে ও এ অঞ্চলের কৃষি সম্পর্কিত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ৫২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)। ফলে এসব অঞ্চলের কৃষকেরা খরা, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে উন্নত জাতের ফসল ফলাতে পারবে।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত গবেষণা করে নানা জাতের ফসল উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
‘এডাপটেশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন অব লাইভহুড ইন সিলেক্টেড ডিস্ট্রিক অব সাউথ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের সারসংক্ষেপ কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। জার্মান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (জিআইজেড) অনুদানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্প এলাকার কৃষকদের কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া তাদের নগদ অর্থ ও উপকরণ বাবদ ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সমুদ্র তীরবর্তী কৃষকদের ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য বিএআরসি বিশেষ গবেষণা পরিচালনা করবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের জন্য যথোপযুক্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষিতে জলবায়ু রেজিলেন্স প্রযুক্তির প্রবর্তন করা হবে।
বিআরসি কর্মকর্তা ও প্রকল্পের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ড. পরেশ চন্দ্র গোয়ালদার বলেন, উপকূলীয় এলাকায় খরা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধার সঙ্গে মিল রেখে উন্নত জাতের ফসল তৈরি করতে চাই। যাতে করে উপকূলীয় কৃষকরা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে।
সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে কি ধরনের ফসল ভালো হবে সে বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা পরিচালনা করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়। এছাড়া এই অঞ্চলের হতদরিদ্র কৃষকদের কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে। কেউ যদি মাছ চাষ ও অন্যান্য আর্থিক কাজ করতে চায় তবে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তীরবর্তী অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিপর্যয়, ঝুঁকি, মোকাবেলা সম্পর্কে সচেতন করা হবে। এ অঞ্চলের মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কমিউনিটি, স্কুল ও পরিবারিক পর্যায়ে অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ করা হবে।
এছাড়া অফ-ফার্ম, অন-ফার্ম ও নন-ফার্ম বিকল্প আয় বর্ধন কর্মসূচি সৃষ্টি করে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞানীদের দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।
বিএআরসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, ও পটুয়াখালীতে ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেশন রিচার্স সেন্টার (সিসিএআরসি) স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সহায়াতা দেওয়া হবে।
বিআরসি সূত্র জানায়, জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)’র তালিকায় বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অত্যাধিক বৃষ্টিপাত ছাড়াও হিমারয়ের বরফ গলা পানিতে বন্যা ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় অঞ্চল নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০০৭ সালের সিডরে দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যে কারণে আগাম সর্তকতা হিসেবে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।