রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই
উঠে এসেছে। অনেক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ
করতে নানা পরামর্শ দিয়েছে। কোনো দল নির্বাচনে পেশিশক্তি ও কালোটাকার প্রভাব কমাতে নির্বাচনী আইনগুলো আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের তাগিদ দিয়েছে। আবার
কোনো দল নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের
পরামর্শ দিয়েছে।
প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন পর্যন্ত সংলাপে না বসলেও তাদের দাবি ও প্রত্যাশার নানা কথা গণমাধ্যমে এসেছে। আশা করি নির্বাচন কমিশন সব দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের একটি প্রস্তাব আমাদের হতবাক করেছে। তারা বলেছে, নির্বাচনের আগে প্রার্থীর কাছ থেকে যে হলফনামা নেওয়া হয়, তার আর প্রয়োজন নেই। কেন প্রয়োজন নেই, সেই ব্যাখ্যা তঁারা দেননি। এই ধরনের দাবি বা প্রস্তাবের পেছনে আর যা-ই হোক সৎ উদ্দেশ্য নেই। প্রার্থীদের হলফনামা কেন নেওয়া হয়? প্রার্থী সম্পর্কে যাতে তাঁর ভোটার তথা দেশবাসী আগাম ধারণা পেতে পারেন।
হলফনামায় প্রধানত দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রার্থীর আয়-ব্যয়, সম্পদ ও ধারদেনা। দ্বিতীয়ত, অতীত রাজনীতির খতিয়ান। কোনো প্রার্থীর মনে যদি ‘পুলিশ পুলিশ’ ভয় না থাকে, তাহলে হলফনামা দিতে আপত্তি থাকার কথা নয়। হলফনামা নিয়ে এ ধরনের আপত্তি বুর্জোয়া হিসেবে পরিচিত দল করলে নাহয় তাদের সহজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলে চালিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু এমন একটি দল এই প্রস্তাব দিয়েছে, যার নামের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র তকমা রয়েছে। প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সে ক্ষেত্রে আদালতের রায় বদল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের এটি বদলের ক্ষমতা নেই। আমরা মনে করি এই প্রস্তাব দিয়ে দলটি নির্বাচন কমিশনের ওপর অযাচিত চাপ সৃষ্টি করেছে।
অতএব, হলফনামা নিয়ে নতুন বিতর্ক না তুলে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের
কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকেই অধিক মনোযোগ দিক। তাদের মনে রাখতে হবে প্রার্থীর হলফনামা কেবল জনগণের কাছে নিজেকে প্রকাশ করা নয়, আয়নায় নিজের মুখ দেখাও।