বাংলাদেশে তৈরি ‘উভচরবাড়ি’

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

6d00201fe840ce58b9ef45b89eedf2d8-59dc33e87745f

 

 

 

 

ভরদুপুরে দেখলাম পুকুরের পানিতে ভাসছে বাড়ি। কাছে যেতেই চোখ হলো ছানাবড়া। কারণ, ছোট বাড়িটি দেখতে আর দশটা বাড়ির মতোই। জানালা–দরজাও আছে। অথচ দিব্যি ভাসছে পানিতে। যেন কল্পনার বাড়ি।

রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুরের হাউজিং ও বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) পুকুরে গত রোববার দুপুরে বাড়িটির দেখা মেলে। এইচবিআরআই কর্তৃপক্ষ জানায়, বাড়িটি বিশেষভাবে তৈরি। এখানে বসবাস করতেও কোনো অসুবিধা নেই।

এইচবিআরআইয়ের পরিচালক আবু সাদেক বলেন, নেদারল্যান্ডসের প্রকৌশলবিদদের অনুকরণে বাংলাদেশি গবেষকেরা প্রথমবারের মতো এই বাড়ি বানিয়েছেন। এর নাম ‘এম্ফিবিয়ানহাউস’ বা ‘উভচরবাড়ি’।

আবু সাদেক জানান, কয়েক দশক ধরে চেষ্টা করে তাঁরা এই বাড়ি বানিয়েছেন। এই বাড়িতে বসবাস করতে কোনো ঝুঁকি নেই। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের জন্য এই বাড়ি খুবই উপযোগী। কারণ, প্রতিবছর এসব অঞ্চল পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায়। বন্যার পানিতেও এই বাড়ি বসবাসের উপযোগী।

এইচবিআরআইয়ের গবেষক মোহাম্মাদ মেজবাহউদ্দিনের সঙ্গে পুকুরে গেলাম। দেখা গেল, পুকুরে বাড়িটি শোলার মতো ভাসছে। বাড়িতে একটি দরজা ও দুটি জানলা আছে।

24f29298cb1bc27ef4ace321d3b041cc-59dc33e87a612

 

 

 

 

পরিচালক আবু সাদেক বলেন, বাড়িটির দেয়াল ও মেঝে বালু দিয়ে তৈরি ফেরোসিমেন্ট নামে বিশেষ একধরনের মিশ্রণ দিয়ে বানানো। সিমেন্ট বা ইটের বাড়ির চেয়েও এটি বেশি টেকসই। এই বাড়ি পরিবেশবান্ধবও।

উভচরবাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত গবেষক মোহাম্মাদ মেজবাহউদ্দিন। তিনি জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কমপক্ষে ২০ জন মানুষকে এই বাড়ি ভাসিয়ে রাখতে পারে। বাড়ির দেয়ালগুলো একটু বেশি পুরু। এগুলো তাপ প্রতিরোধক। শুধু বাড়িই নয়, এইচবিআরআই রমনা পার্কে ভাসমান রেস্তোরাঁও বানিয়েছে এই প্রকৌশলবিদ্যা ব্যবহার করে। শরীয়তপুরে এ ধরনের একটি স্কুলও রয়েছে তাদের। বন্যার সময় এটি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়।

খরচ কেমন পড়ে, তা জানতে চাইলে মেজবাহউদ্দিন বলেন, গবেষণার অংশ হিসেবে বানানো বলে এখন খরচ একটু বেশি। তবে ব্যবহার বাড়লে ও সবার সহযোগিতা পেলে পাকাবাড়ি বানাতে যে খরচ হয়, তার চেয়ে কম খরচে এ রকম একটি বাড়ি বানানো সম্ভব। বন্যায় এই বাড়ি মানুষকে বাঁচাবে। সম্পদ বাঁচাবে।

আরও বড় পরিসরে করার উদ্যোগ কেন নিচ্ছেন না, তা জানতে চাইলে আবু সাদেক বলেন, এটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এমওইউ করবেন। সরকারি পর্যায়েও যোগাযোগ হয়েছে। এগুলো শেষ হলে কাজ অনেক এগোবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *