প্রতারণাই তাঁর পেশা

Slider খুলনা

47a1ed2a64007f8d9e9065f408878782-59dc2bd4be62b

 

 

 

 

ফোনে নিজেই সেজে বসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা; কখনো নেতার একান্ত সচিব (পিএস)। এরপর নেতার সুপারিশ হাতে নিয়ে সশরীরে হাজির হন প্রশাসনের বড় কর্মকর্তাদের কাছে। মুমূর্ষু রোগীর স্বজন পরিচয় দিয়ে সাহায্য নেন। এভাবে প্রতারণা করে অর্থ কামানোই তাঁর পেশা।
এই প্রতারকের নাম ইমাম হাসান (২২)। সর্বশেষ চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে মেয়রের বুদ্ধিমত্তায় তা ভেস্তে গেছে। ধরা পড়ে এখন শ্রীঘরে ইমাম।
ইমাম হাসানের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চর কাবলি গ্রামে। বাবার নাম মৃত মুকুল হাওলাদার।
মেয়র ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়ার বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র পরিচয়ে এক তরুণ কেদারগঞ্জ এলাকায় মেয়রের বাসায় দেখা করতে যান। মেয়র তখন দোতলায় ছিলেন। নিচে নামার আগেই ওই তরুণ বাসার বাইরে চলে যান। এরপর মেয়রের মুঠোফোনে একটি কল আসে। অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের পিএস শ্যামল পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি হাছান মাহমুদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর ফোনের অপর প্রান্ত থেকে মেয়রকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে কথা বলেন এক ব্যক্তি। মেয়রকে বলা হয়, তাঁর কাছে এক তরুণ যাবেন। তাঁর মা গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য মেয়রকে আর্থিক সহযোগিতা করতে বলা হয়।
মেয়র ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি সরল বিশ্বাসে ওই তরুণকে পৌরসভা কার্যালয়ে পাঠাতে বলি। বেলা ১১টার দিকে তিনি তাঁর মায়ের কিডনি চিকিৎসার সাহায্যের আবেদনসহ পৌরসভায় এসে দেখা করেন। আবেদনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা হাছান মাহমুদের সুপারিশ এবং তাঁর একটি ভিজিটিং কার্ড সংযুক্ত ছিল। তবে তরুণের চেহারা দেখে আমার সন্দেহ হয়। এরপর তথ্য যাচাই করতে আমি হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে ফোন করি। ঘটনাটি শুনে তিনি বিস্মিত হন এবং জানান, তিনি বা তাঁর কোনো পিএস ফোন করেননি। এরপর ওই তরুণকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সবকিছু স্বীকার করেন।’
পৌরসভা কার্যালয়ে মেয়রের কক্ষে কথা হয় ওই তরুণের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর নাম ইমাম হাসান। বাড়ি পটুয়াখালীতে। কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন করে চুয়াডাঙ্গার হোটেল রয়েল ব্লুতে উঠেছেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এখন তাঁর পেশাই প্রতারণা করা। এর আগে যশোরের উপজেলা পরিষদের একজন ভাইস চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একইভাবে প্রতারণা করে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের কাছে একটি সাহায্যের আবেদন করেছেন। তাঁর কাছ থেকে টাকা পাওয়ার আগেই মেয়রের কাছে ধরা খেলেন।
মেয়র ওবায়দুর রহমান প্রতারণার ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনকে অবগত করেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম ফখরুল ইসলাম দুপুরে পৌর ভবনে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। তিনি প্রতারক ইমাম হাসানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করতে সদর থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *