সব পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ, আয়োজন চলছে। চালের দামসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় এমনিতেই বেকায়দায় রয়েছে জনগণ। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এক বাড়তি চাপ হিসেবে হাজির হবে, যা নেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। খুচরা বা পাইকারি সব পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চাপটি শেষ পর্যন্ত জনগণকেই নিতে হয়।
বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এবার পিডিবি বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আর বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৬ থেকে ১৫ দশমিক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আগামী মাস তিনেকের মধ্যে বিদ্যুতের মূল্য পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।
আমরা মনে করি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের ক্ষেত্রে যে ঘাটতির কথা উল্লেখ করে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়েই সমন্বয় করা সম্ভব। প্রথমত, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সরকার দেশের বাজারে দাম কমাচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা গেলে উৎপাদন খরচ কমবে। দ্বিতীয়ত, ভাড়াভিত্তিক দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে সরকার শুরুতে যে দামে বিদ্যুৎ কিনত, এখন সে দামে কেনা যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ ধরে তখন দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র তাদের বিনিয়োগ কার্যত উঠিয়ে নিয়েছে। এখন তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়টি নবায়ন করার ক্ষেত্রে কম দামে কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, সব গ্রামে বিদ্যুৎ দিতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) যে মাত্রায় বিনিয়োগ করছে, সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিক্রি করে দাম ওঠানো সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, এই ঘাটতি পূরণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। আরইবিকে ভর্তুকি দিয়ে সরকার এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে। আর সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অপচয় ও দুর্নীতি কমানোর মাধ্যমেও ঘাটতি কমানো সম্ভব।
বিদ্যুৎ খাতে সরকারের পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়াও বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ। সরকারের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় স্বল্প মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা থাকলেও বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের দাম কমাতে হলে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র বা স্বল্প মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প নেই। এসব উদ্যোগ না নিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর মতো সহজ পথ ধরার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।