যৌথ প্রযোজনার নিয়ম না মেনে নির্মিত ‘নবাব’ ও ‘বস ২’ ছবি দুটির মুক্তি ঠেকাতে এ বছর ২১ জুন চলচ্চিত্র পরিবারের আন্দোলনের সময় লাঞ্ছিত হন বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তখন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির ওই নেতা দাবি করেন, তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনায় জড়িত ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, খল চরিত্রের অভিনেতা মিশা সওদাগর এবং প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। এ ঘটনার জন্য আজ রোববার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন রিয়াজ, মিশা ও খসরু।
রাজধানীর রাজমণী ঈশা খাঁ হোটেলে ‘চলচ্চিত্র পরিবার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির মিলনমেলা’ শিরোনামের এক অনুষ্ঠানে ক্ষমা চান তাঁরা। মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমি যদি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকি, তাহলে আমার বিচার হবে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করব। সারা জীবন বলব, নওশাদ ভাইয়ের মনে যদি জানা-অজানায়, ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, আলোকে-আঁধারে কোনোভাবে এক ফোঁটা কষ্ট দিয়ে থাকি তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। মাফ করে দেবেন।’
নওশাদকে ‘প্রিয় বড় ভাই’ দাবি করে ক্ষমা চেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রযোজক খসরু। তিনি বলেন, ‘সিনেমা হল মালিক নেতার প্রতি নয়, ক্ষোভ ছিল চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যের প্রতি। তবে যা হয়ে গেছে, তা তো গেছেই। সবকিছুর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাই। তিনি (নওশাদ) আমার বড় ভাই। দেখা হলেই বুকে টেনে নেন। তাঁর সঙ্গে এখনো সখ্যের অভাব নেই। আমরা মিলেমিশে থাকব।’
খসরু আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রের স্বার্থে কোনো আপস করব না। আমাদের হল দখল করে সংকটে ফেলা হচ্ছে। অনেক ভালো প্রেক্ষাগৃহ রাজনীতির মুখে পড়ে ক্ষতি গুনছে। কোটি কোটি টাকা লগ্নি করা প্রযোজকদের কী অন্যায়! জাজ মাল্টিমিডিয়া অনেক দিন ধরেই চলচ্চিত্রকে নির্যাতন করছে।’
২১ জুন যৌথ প্রযোজনা বিতর্কে জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলী, প্রদর্শক ও বুকিং এজেন্ট সমিতির মুখোমুখি অবস্থান নেয় চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠন। সেদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এফডিসি থেকে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেন্সর বোর্ড অভিমুখে একটি মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা স্লোগান দেন, ‘চলচ্চিত্রের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে, সেন্সর বোর্ড ঘেরাও হবে’, ‘যৌথ প্রতারণা চলবে না’। সেখানেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে। ঘেরাওকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের মালিক, প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও সেন্সর বোর্ড সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তখন কয়েকজন কর্মী উত্তেজিত হয়ে তাঁর ওপর আক্রমণ করেন। নওশাদের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে যায়।
আজ মিলনমেলায় সবাই যখন সেদিনের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন, তখন নওশাদও সব কষ্ট ভুলে যান। তিনি বলেন, ‘আমার গায়ে হাত তোলা মানেই চলচ্চিত্র পরিবারের গায়ে হাত তোলা। আমি তো এই পরিবারের বাইরের কেউ না। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত একজন মেকআপম্যানের অপমানও কিন্তু আমাদের সবার অপমান মনে করা উচিত। আমার মনেও কষ্ট ছিল। তবে আজকের এ চমৎকার আয়োজনের পর আমার আর কোনো ক্ষোভ নেই। আমরা এখন থেকে সবাই বন্ধু। একসঙ্গে হয়ে কাজ করি। সবাই ভালো থাকুন, সবার জন্য আমার শুভ কামনা।’
‘চলচ্চিত্র পরিবার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির মিলনমেলা’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক ফারুক, প্রদর্শক সমিতির পক্ষে শোয়েব উর রশীদ, মিয়া আলাউদ্দীন, সুদীপ্ত কুমার দাশ। চলচ্চিত্র পরিবারের পক্ষে আরও ছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম, সোহেল রানা, আমজাদ হোসেন, সোহানুর রহমান সোহান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদিউল আলম, পপি, অঞ্জনা সুলতানা, জায়েদ খান, সাইমন, ইমন, অরুণা বিশ্বাস, আনজুমান আরা শিল্পী, নিঝুম রুবিনা, অধরা খান, প্রেক্ষাগৃহ মালিক ও চলচ্চিত্র পরিবারের নেতা-কর্মীরা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন চিত্রনায়ক রিয়াজ।