নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ সাত খুনের সঙ্গে র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ, কর্মকর্তা আরিফ ও এম এম রানা ছাড়াও আরও ২১ সদস্য জড়িত ছিলেন বলে র্যাবের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি র্যাবের তদন্ত কমিটি গত রোববার (২৩ নভেম্বর) এই প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর আদালতে ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারেক সাঈদসহ র্যাব-১১ এর তিন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরাসরি নারায়ণগঞ্জের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে র্যাব সদর দপ্তরের সঙ্গে এই খুনের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আলম ও র্যাবের আইন শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর হাইকোর্টের নির্দেশে র্যাব সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় সাত মাস তদন্তের পর হাইকোর্টে উপস্থাপনের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয়।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল তাদের মরদেহ শীতলক্ষা নদীতে ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় র্যাব১১ এর সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। পরে ৫ মে হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র দাসের বেঞ্চ স্বপ্রনোদিত হয়ে র্যাব-১১ এর তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে র্যাব সদর দপ্তরকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। পরে তিন কর্মকর্তাসহ অন্যরা গ্রেপ্তার হন।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ৮ মে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডিআইজি আফতাব উদ্দিনকে প্রদান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে র্যাব। কমিটির অপর সদস্যরা ছিলেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার গোলাম সারওয়ার, মেজর মোহাম্মদ সাদিক ও এসপি সাজ্জাদ।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা মেনে তদন্ত করে আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি। এটা আদালতে উপস্থাপনের বিষয়। এ ব্যাপারে আর কিছুই বলা যাবে না।’
তবে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, তদন্তের সময় কমিটি শতাধিক র্যাব কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষ, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ সদস্য ও গঠনার শিকার পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের জবানবন্দি নিয়েছেন। অপহরণের স্থান, খুনের জায়গা, লাশ পানিতে ফেলাসহ ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বিভিন্ন আলামতও পরীক্ষা করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে যেসব র্যাব সদস্য অংশ নিয়েছেন এটা তাদের নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেচনা থেকে করেছেন। ১৬৪ ধারায় তারা জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি দিয়ে আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করলেও র্যাব সদর দপ্তরকে জড়িয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কাউন্সিলর নজরুল ও চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের সংবাদ পাওয়ার পর র্যাব সদর দপ্তরের কঠোর নির্দেশ ছিল অপহৃতদের উদ্ধার করার। এমনকি অপহরণকারীদের খুঁজে বের করারও নিদেশ ছিল সদর দপ্তরের। কিন্তু র্যাব-১১ এর কর্মকর্তা ও সদস্যদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এমনকি তারা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কিছু জানাননি। এটা নির্দেশ অমান্য করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনই নজরুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। আর সে কাজটি করতে তিনি র্যাবের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করেন।