সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনন্যসাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক অতুলনীয় কাজের জন্য প্রতিবছর দেওয়া হয় নোবেল পুরস্কার। চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি—এ ছয়টি বিষয়ে নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে ধরা হয়।
এ বছর যেমন আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বাণী করা মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পাচ্ছেন রাইনার ওয়েইস, ব্যারি বারিস ও কিপ থর্ন। রসায়নে ক্রিয়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপি উদ্ভাবনের জন্য নোবেল পাচ্ছেন জ্যুকেয়েস ডোবেশেট, জোয়াকিম ফ্রাঙ্ক ও রিচার্ড হ্যান্ডারসন। ‘দেহঘড়ি’ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার সূত্র আবিষ্কার করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পাচ্ছেন জেফ্রি হল, মাইকেল রোসব্যাস ও মাইকেল ইয়ং। তবে অতুলনীয় সব আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করলেই কিন্তু সবার কপালে নোবেল জোটে না। পুরস্কারটির ১১৬ বছরের ইতিহাসে এমন কিছু আবিষ্কার কিংবা উদ্ভাবন হয়েছে, যা নোবেল জেতার মতো হয়েও জিততে পারেনি। ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফি’র এমন দশটি উদ্ভাবন তালিকার মধ্য থেকে জেনে নিন পাঁচটির কথা—
দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব
ষাটের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে এমন এক যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যা পরবর্তী সময়ে ইন্টারনেট হিসেবে বিকশিত হতে পারত। এর বেশ কয়েক বছর পর ১৯৮৯ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব’ (ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ) ধারণার প্রবর্তন এবং পরের বছর তা বাস্তবে রূপ দেন ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নাস-লি। প্রথম ওয়েবসাইটটি তাঁর হাতেই তৈরি। ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করতে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের’ ভূমিকা অপরিসীম। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং সাবলীল প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করতে বৈপ্লবিক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এত বড় আবিষ্কার করেও নোবেল পাননি টিম বার্নাস-লি
মানুষের জিন বিন্যাস
মানুষের পূর্ণাঙ্গ জিন-বিন্যাসকে ধরা হয় বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম সেরা উদ্ভাবন হিসেবে। যদিও এটা কোনো আবিষ্কার নয়, ছিল একটি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্প। সেই প্রকল্পের বিজ্ঞানী এরিক ল্যান্ডার নোবেল না পাওয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘পাগলে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য আপনি কখনো নোবেল পাবেন না।’
কৃষ্ণগহ্বরের মৃত্যু
১৯৭০ সালের এক রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় স্টিফেন হকিংয়ের মাথায় একটি ধারণা খেলে যায়। পরে সেই মুহূর্তকে হকিং বলেছিলেন, ‘পরমানন্দ’ হিসেবে। তিনি ভেবেছিলেন, কৃষ্ণগহ্বরের মৃত্যু নেই। কিন্তু হকিং সেই রাতে বুঝতে পেরেছিলেন, এত দিন ভুল ভেবেছেন। কৃঞ্চগহ্বরেরও বিনাশ আছে। ধীরে ধীরে ভর হারিয়ে একদিন তা বিলীন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো হকিং ব্যাপারটা প্রমাণ করতে পারেননি। কারণ, কৃষ্ণগহ্বরের জীবনকাল মানুষের চেয়ে অনেক অনেককাল বেশি। অনেকেই মনে করেন, হকিংয়ের এ জন্য নোবেল পাওয়া উচিত ছিল।
পর্যায় সারণি
বিভিন্ন মৌলিক পদার্থকে একত্রে উপস্থাপনের আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত ছকই পর্যায় সারণি কিংবা ‘পিরিয়ডিক টেবিল’। পর্যায় সারণির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলেফ। ১৮৬৯ সালে তিনি এ সারণি প্রকাশ করেন। ১৯০৫ ও ১৯০৬ সালে তিনি এ জন্য নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও শেষ পর্যন্ত মেন্ডেলেফের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। নোবেল কমিটি ভেবেছিল, মেন্ডেলেফের এ আবিষ্কার বেশ পুরোনো এবং এত দিনে তা প্রচলিত হয়ে গেছে, নতুন কিছু নয়!
বিজলি বাতি
অমর বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ১৮৭৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে প্রথম বিজলি বাতি জ্বেলে বলেছিলেন, ‘আমরা এই বাতি জ্বালানোর খরচ এত সস্তা করে দেব যে ভবিষ্যতে মোম জ্বালাবে শুধু ধনীরা।’ সত্যি বলতে এডিসনের বিজলি বাতি পাল্টে দিয়েছে সভ্যতার গতিপথ। এখন ঘরে কিংবা কারখানায় বিজলি বাতি ছাড়া আমাদের চলে না। এডিসন কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাননি। এটাকে অনেকে বলেন নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে ‘ঐতিহাসিক অবিচার’ হিসেবে।