বিচারের নামে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ!

Slider চট্টগ্রাম

b1cc612b1bac13f867c4e67e62c3394c-593622c3e0838

 

 

 

 

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার ২ নম্বর চরবাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিচারের নামে এক নারীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে ওই নারী বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার সুবর্ণচরের চরজব্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।

মামলায় চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনসহ দুজনকে আসামি করা হয়েছে। অপর আসামির নাম মো. রবিউল। পুলিশ রবিউলকে গ্রেপ্তার করেছে।

এর আগে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন গত বছরের আগস্টে এক স্কুলছাত্রীকে সালিসের নামে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ইউপি কার্যালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন হলে বেশ কিছুদিন পালিয়ে থাকেন মোজাম্মেল। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে সালিস-বিচারে ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার ধর্ষণের অভিযোগে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে মামলা করলেন আরেক নারী।

আজ ওই নারী মুঠোফোনে বলেন, বিবাহিত হলেও তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। চার বছর ধরে তাঁর স্বামী তাঁর কোনো খোঁজখবর নেন না। তিনি শুনেছেন, তাঁর স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছেন। তাঁদের ছয় বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। কিছুদিন আগে হাতিয়ার নলেরচর ভূমিহীন বাজার এলাকার রবিউল নামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

ওই নারী জানান, শুরুতে অবিবাহিত বলে দাবি করলেও পরে তিনি শোনেন ওই যুবক বিবাহিত। এটি জানার পর তিনি ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ওই যুবক তাঁদের বাড়িতে চলে আসেন। তখন এলাকার লোকজন তাঁকে আটক করেন এবং বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেলকে জানান। পরে চেয়ারম্যান রাত সাড়ে ১০টার দিকে চৌকিদার পাঠিয়ে রবিউলকে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যান। একই সময় ওই নারীকেও ইউপি কার্যালয়ে যেতে বলা হয়। পরে ওই নারী, তাঁর এক বোন এবং তিন ভাই ইউপি কার্যালয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান ওই নারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং রবিউলকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ওই নারীর ভাইবোনদের কার্যালয় থেকে বের করে দেন। পরে ওই নারীকে একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে চেয়ারম্যান ওই নারীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান।

ওই নারীর ভাই বলেন, বিচারের নামে চেয়ারম্যান উল্টো তাঁর বোনকে বেধড়ক মারধর করেছেন এবং একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। রাতভর তাঁর বোনকে ওই কক্ষে আটকে রাখা হয়। আজ সকাল সাতটার দিকে চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁর বোনকে ওই কক্ষ থেকে ছেড়ে দেন। পরে তাঁর বোন থানায় গিয়ে মামলা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘…আমি পরিষদের চেয়ারম্যান, আপনি কি মনে করেন? আপনি সাংবাদিক হিসেবে যা লেখার আছে লেখিয়েন, আমাকে কোনো দিন ফোন দিয়েন না।’

সুবর্ণচরের চরজব্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন বলেন, এক নারীকে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেনসহ দুজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এক নারী বাদী হয়ে আজ দুপুরে মামলাটি করেন। মামলার আসামি রবিউলকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামি মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ধর্ষণের অভিযোগটি সত্যি কি না, তা পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে ওই নারীর শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু ওয়াদুদ বলেন, তিনি দুপুরে ঘটনাটি শোনার পর এ বিষয়ে থানায় কথা বলেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি থানা থেকে তাঁকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *