এক মাসের ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বৃহস্পতিবার বিকেলে সস্ত্রীক রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাঁরা লক্ষ্মীপূজায় অংশ নিয়েছেন। তবে তাঁর এই মন্দিরে যাওয়া পূর্বনির্ধারিত ছিল না। বাসার বাইরে সব মিলিয়ে ৬৫ মিনিট ছিলেন তিনি।
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ২ অক্টোবর থেকে হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি। এরপর গত দুই দিন তাঁকে বাসভবন থেকে বের হতে দেখা যায়নি। আজ তাঁর সঙ্গে আইনমন্ত্রী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা সাক্ষাৎ করেন। এরপরই বিকেলে বেরিয়ে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাসভবনে তাঁর গাড়িবহর নিয়ে ঢোকেন। ৩৪ মিনিট তিনি সেখানে অবস্থান করেন। বাসভবন থেকে বের হওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি তাঁকে সিঁড়ি বারান্দায় এসে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন। এ সময় তাঁর পরনে ধূসর রঙের পাঞ্জাবি-পায়জামা ছিল। তবে আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই চলে যান।
আইনমন্ত্রী চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরই প্রধান বিচারপতির গাড়ি তাঁর বারান্দায় গিয়ে অবস্থান নেয়। ৫টা ২৫ মিনিটে তিনি ও তাঁর স্ত্রী গাড়িতে ওঠেন। এ সময় তাঁর পরনে সেই ধূসর রঙের পাঞ্জাবি-পায়জামাই ছিল।
প্রধান বিচারপতির গাড়ির সামনে ও পেছনে পুলিশের দুটি পিকআপ ছিল। প্রতিটিতে চালক বাদে পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য ছিলেন। তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। প্রধান বিচারপতির গাড়ির পাশ দিয়ে কোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেলকে যেতে দেননি তাঁরা। গাড়ি জ্যামে দাঁড়ালে সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা পিকআপ থেকে নেমে তাঁর গাড়িকে ঘিরে রেখেছেন। গাড়ির বহরটি কদম ফোয়ারা হয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নেমে প্রধান বিচারপতি ও তাঁর স্ত্রী মন্দিরের মূল অংশে গিয়ে পূজা করেন। পুলিশ সদস্যরা এ সময় মণ্ডপের বাইরে অবস্থান করেন। পাঁচ মিনিটে পূজা শেষ করে তাঁরা বেরিয়ে আসেন।
পূজা শেষে প্রধান বিচারপতি ও তাঁর স্ত্রী মন্দিরের প্রশাসনিক ভবনের দোতলার অতিথি কক্ষে যান। তাঁদের সঙ্গে মন্দিরের একজন কর্মকর্তাও ছিলেন। পুলিশ সদস্যরা তখন অতিথি কক্ষের সামনে অবস্থান নেন।
১২ মিনিট পর প্রধান বিচারপতির গাড়িচালক একটি মোবাইল হাতে নিয়ে এসে অতিথি কক্ষের দরজার কড়া নাড়তে থাকেন। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেন ‘স্যারের ফোন এসেছে’। কিছুক্ষণ কড়া নাড়ার পর প্রধান বিচারপতি নিজেই দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি চালকের ওপর কিছুটা বিরক্ত হন বলেই মনে হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ও তাঁর স্ত্রী এরপর মন্দিরে স্থাপিত দেবী দুর্গার মূর্তিতে প্রণাম করে সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে মন্দির প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। এরপর তাঁর গাড়িবহর পলাশী মোড় হয়ে শাহবাগ হয়ে সাড়ে ছয়টায় বাসভবনে ঢোকে। গাড়িবহরটি যখন টিএসসি অতিক্রম করে, তখন সাদা রঙের আরেকটি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডওয়ালা গাড়িবহরে ঢোকে। এই গাড়িটিও তাঁর বাসভবনে ঢোকে।
এদিকে মন্দিরে প্রধান বিচারপতিকে এই প্রতিবেদক ‘স্যার কেমন আছেন’ বলে দুবার কুশলাদি জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে থাকা চকবাজার থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব সরকার বলেন, প্রধান বিচারপতি আসবেন, এমন কোনো তথ্য তাঁদের কাছে ছিল না। হঠাৎ করেই তিনি আসেন।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন কমিটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব কুমার দে বলেন, প্রধান বিচারপতির আসার বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত ছিল না। তিনি এসেছিলেন লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে। এ সময় মন্দিরে পূজা উদ্যাপন কমিটির তেমন কোনো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন না। যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির তেমন কোনো কথাও হয়নি।