মাকে ৩৮ টুকরা করে খুন করা হয়েছে। সেই হত্যার অভিযোগে সৎবাবা পলাতক। নানা-নানি আগলে রাখছেন ঊর্মি খাতুন (১৩) ও তামিম হোসেনকে (৭)। হতদরিদ্র নানা-নানিই এখন ভরসা সব হারানো শিশু দুটির।
ঊর্মি ও তামিমের নানাবাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নৈহাটি গ্রামে। নানার নাম তক্কেল আলী। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। কথা হয় নানি রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঊর্মি ও তামিমের মা তাসলিমা খাতুন ছিলেন তাঁদের একমাত্র মেয়ে। প্রায় ১৪ বছর আগে পাশের খাজুরা গ্রামের বাবুল হোসেনের সঙ্গে তাসলিমার বিয়ে হয়। জন্ম নেয় ঊর্মি। কিন্তু এই সংসার বেশি দিন টেকেনি। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে তাসলিমা ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ নেন। সেখানে পুলিশ সদস্য সাহেব আলীকে বিয়ে করেন। এই সংসারে তামিমের জন্ম হয়। একপর্যায়ে তাসলিমাকে তাড়িয়ে দেন সাহেব আলী।
রাবেয়া খাতুন বলছেন, তাসলিমা আর বিয়ে করবেন না বলে মনস্থির করেন। চাকরি করে নিজেই দুই সন্তানকে লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য ঊর্মি ও তামিমকে তাঁর (নানি) কাছে রেখে এক বছর আগে চলে যান ঢাকার আশুলিয়ায়। সেখানে একই পোশাক কারখানায় কাজের সুবাদে পরিচয় হয় নৈহাটির পাশের গ্রাম বাগডাঙ্গার মজিবর রহমানের সঙ্গে। মজিবর প্রলোভন দেখিয়ে সাত মাস আগে তাসলিমাকে বিয়ে করেন।
রাবেয়া খাতুন বলেন, এই বিয়েই কাল হয় তাসলিমার। বিয়ের পর প্রায়ই দুজনের মধ্যে গোলমাল হচ্ছিল। একটা সময় তাঁরা এলাকায় চলে আসেন। কিন্তু মজিবর বাড়িতে না রেখে তাসলিমাকে নানা স্থানে লুকিয়ে রাখতেন। এই অবস্থায় তিনি (রাবেয়া) মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাসলিমা কিছুদিন বাড়িতে থেকে আবারও আশুলিয়ায় গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ নেন। মজিবরও তাঁর পিছু নেন। তিনি ওই এলাকার একটি দরজির দোকানে কাজ নেন।
দুজন দুই জায়গায় বসবাস করতেন। কিন্তু গত ঈদুল আজহার দুই দিন আগে ৩০ আগস্ট তাসলিমাকে জামগড়া এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যান মজিবর। ওই বাসাতেই খুন করা হয় তাঁকে। বাসার একটি প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতরে তাসলিমার অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। লাশ ৩৮ টুকরা করে ড্রামে ভরা হয়।
রাবেয়া খাতুনদের কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। ১০ শতক জমির ওপর তিনটি পরিবারের বাস। রাবেয়া-তক্কেল দম্পতির দুই ছেলে মাহফুজুর রহমান ও হাফিজুর রহমান বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। তক্কেল আলী ঝিনাইদহ শহরের একটি তেলকলে কাজ করেন। সামান্য যা বেতন পান তা দিয়ে সংসার চলে। ঊর্মি ও তামিমের জন্য মা তাসলিমা নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। তা দিয়ে তাদের পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ চলত। ঊর্মি এখন সপ্তম শ্রেণিতে আর তামিম শিশু শ্রেণিতে পড়ে।
এই খুনের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মলয় কুমার সাহা বলেন, তাঁরা মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছেন। তাসলিমার স্বামী মজিবর পলাতক রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মজিবরের বন্ধু মুকুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বাড়িও বাগডাঙ্গা গ্রামে।