চালের আমদানি শুল্ক সময়মতো না কমিয়ে দফায় দফায় কমানো হয়েছে। এ সময়ে রপ্তানিকারক দেশ ভারতও চালের দাম দফায় দফায় বাড়িয়েছে। ফলে আমদানি শুল্ক কমানোর পরেও বাজারমূল্য কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
চালের দাম বাড়ার এটি একটি সম্ভাব্য কারণ বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ কথা জানা গেছে। বৈঠকে চালের দাম বাড়ায় কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
চালের দাম বাড়ার পেছনে আরও কয়েকটি কারণ দেখিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, সাধারণত আমন মৌসুম শেষ হওয়ার পর বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকে। বোরো মৌসুম শেষ হওয়ার পর তা আবার কমতে থাকে। গত মার্চে মোটা চালের গড় বাজার দর ছিল ৩৪ দশমিক ০৯ টাকা। এপ্রিলে ছিল ৩৪ দশমিক ৭৯ টাকা। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওর অঞ্চলের ছয়টি জেলায় অকালবন্যায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মোটা চালের দাম বাড়তে থাকে। মে মাসে দাম হয় ৩৮ দশমিক ০৯ টাকা। ওই সময় আমদানির ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ শুল্ক থাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল আমদানি হয়নি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মাত্র ১ দশমিক ৩৩ লাখ মেট্রিক টন চাল বেসরকারিভাবে আমদানি হয়। ফলে এ সময় চালের জোগান প্রয়োজনমাফিক বাড়েনি। পরবর্তী সময়ে সারা দেশে বোরো ধান নেকব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ফলন কমে যায়। এর ওপর উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বন্যা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বাজারে চালের দামের বিরূপ প্রভাব পড়ে।
বৈঠক সূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে চালের দাম নিয়ে সংসদীয় কমিটির দুজন সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এর মধ্যে চালের দাম বেড়ে যাওয়া সরকারের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। তাঁরা এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কথাও বলেন। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম চালের দাম বাড়ার কারণগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলে একজন সদস্য বলেন, মন্ত্রণালয় কী উদ্যোগ নিয়েছে বা নিচ্ছে সেটা নয়, তাঁরা দেখতে চান চালের দাম কমেছে।
বৈঠকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও মজুত নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, এর আগে গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও চালের দাম বাড়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন কমিটির সদস্য ফজলে নূর তাপস। তাপস বলেছিলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ে চরম ব্যর্থতা এবং গাফিলতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সরকার নতুন কিছু করছে না। ৪৫ বছর ধরে যা করা হয়েছে, তা-ই করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হয়, সমস্যা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি আছে। কিন্তু যখন কোনো দুর্যোগ আসে, তখন সবকিছুই ভেঙে পড়ে। সামান্য একটা হাওরের বন্যা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের মজুত কোথায়, সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছিলেন, মনে হয় দুর্যোগ মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না।
কমিটির সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদও চালের দাম বাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। একই বৈঠকে কমিটির আরেক সদস্য নুরুল হক বলেছিলেন, তাঁর ধারণা, বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে লেজেগোবরে অবস্থা। কোনো বিষয়েই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সামনে এগোনো যাচ্ছে না।
আজ সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটি খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ‘খাদ্য মজুত পলিসি’ প্রণয়ন করার সুপারিশ করে। কমিটির সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, শেখ ফজলে নূর তাপস ও বেগম শিরিন নাঈম বৈঠকে অংশ নেন।