আজ শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
বিএনপির লিখিত বক্তব্যে দেশের ‘ভয়াবহ’ চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন, খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জুলুম নির্যাতন চলছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম ভেঙে পড়েছে।
দলটির দাবি নারী-শিশু নির্যাতন ও পাশবিকতা থামছেই না, নারীরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে, কোমল মতি শিশু ও স্কুল কলেজের মেয়েরাও আতঙ্কিত জীবন যাপন করছে, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সবশ্রেণির মানুষ, মানুষের বাক স্বাধীনতার ছিটে ফোটাও নেই, গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরে রাখা হয়েছে।
দেশের অর্থনীতি নাজুক উল্লেখ করে বলা হয়েছে চাল, আটাসহ সকল নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া, চালের দাম কয়েক টাকা কমেছে বলে মন্ত্রীরা গলা ফাটালেও খুচরা বাজারে দাম কমেনি এক টাকাও, লুটপাটের কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, কলকারখানা প্রায় বন্ধের উপক্রম, বিদেশি বিনিয়োগ নেই, দেশি বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে নিয়েছেন, সরকারের ব্যর্থনীতির কারণে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো দূরে থাক লাখ লাখ কর্মক্ষম শ্রমিককে ফেরত পাঠানোর ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নেমেছে, নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারত্বের কবলে পড়েছেন যুবসমাজ, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি, ট্যাক্স, হোল্ডিং টেক্স বৃদ্ধির কারণে জনগণের মধ্যে নাভিশ্বাস অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার পরিবেশ বিনাশী প্রকল্প নিয়ে সুন্দরবনকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে, মিথ্যা উন্নয়নের জোয়ারে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও ব্রিজ কালভার্টের বেহাল দশা বিরাজ করছে, কূটনৈতিক ব্যর্থতায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিতে যাচ্ছে।
বিএনপির দাবি বাংলাদেশের জীবনে এমন ভয়াবহ দুঃশাসন ও নাজুক পরিস্থিতি আর কখনো আসেনি। দলটি বলছে, ২০টি মানবাধিকার সংগঠনের এই মোর্চা হিউম্যান রাইটস ফোরামের মতে গত ৪ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৮২৩টি। বিএনপির মতে এই সংখ্যা আরও বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব ছাড়াই শেষ হয়েছে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বিতর্ক। এ ছাড়া গতকালও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবে কি না সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হওয়ার প্রধান কারণ কূটনীতিক ব্যর্থতা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারা বিশ্ব সোচ্চার হলেও বর্তমান সরকারের ভূমিকা নতজানু। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা নির্যাতন চালানো হচ্ছে, এমনকি বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও জাতিসংঘসহ প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশগুলোকে পাশে নিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কারণ একটাই-জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে তাদের কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের গ্রামের বাড়িতে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে উৎসুক জনতা যোগ দিতে গেলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। এই সরকারের আমলেই দেশের জনগণ সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কথা আবারও নতুন করে শুনেছে।