অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসা বিক্রি সম্পন্ন করতে চেয়েছিল শেভরন। চীনা প্রতিষ্ঠান হিমালয় এনার্জির সঙ্গে গত এপ্রিলে এ-সম্পর্কিত চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তেল-গ্যাস কোম্পানিটি। বাংলাদেশ শেভরনের ব্যবসা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো তা চূড়ান্ত করেনি। শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র বিক্রির অনুমতি তাই এখনই মিলছে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র।
২০১৬ সালের অক্টোবরেই বাংলাদেশে পরিচালনাধীন ব্যবসা বিক্রির বিষয়ে আলোচনা শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করে শেভরন। এর পরই এটি কিনে নেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এজন্য শেভরনের সম্পদ মূল্যায়নে পরামর্শক হিসেবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক উড ম্যাকেঞ্জিকে নিয়োগ দেয়া হয়। গত জুলাইয়ে উড ম্যাকেঞ্জি তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন পেট্রোবাংলার কাছে জমা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, উড ম্যাকেঞ্জি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর পরই তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে শেভরন পরিচালিত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর আর্থিক পরিমাণ নিয়ে ধারণা দিয়েছে উড ম্যাকেঞ্জি। গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কারিগরি সক্ষমতার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কয়েক দফা আলোচনা হলেও শেভরনের ব্যবসা কেনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্পাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যবসা হস্তান্তর করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে শেভরনের। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না করায় সম্পদ বিক্রির অনুমোদন সহসা পাচ্ছে না শেভরন।
জানতে চাইলে বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। উড ম্যাকেঞ্জির মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে। সেটা আমাদের গোপনীয় বিষয়, বলা যাবে না।
বাংলাদেশে তাদের ২ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা বিক্রির বিষয়ে গত এপ্রিলে চীনের হিমালয় এনার্জির সঙ্গে চুক্তি করে শেভরন। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিক্রয় চুক্তি সম্পন্নের লক্ষ্য ছিল
শেভরনের। তবে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এ চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনায় সরকারি সংস্থা পেট্রোবাংলার সক্ষমতা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা বা ভবিষ্যতে এতে বিনিয়োগের সক্ষমতা আছে কিনা, সেই সংশয় থেকে শেভরনের ব্যবসা কেনার বিষয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে পেট্রোবাংলা।
বাংলাদেশে শেভরনের ব্যবসা ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত চীনের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে গ্যাসক্ষেত্র বিক্রয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে শেভরনকে। সেক্ষেত্রে তারা হয় চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে, না হয় বাংলাদেশে তাদের কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করবে।
বাংলাদেশে শেভরনের গ্যাসক্ষেত্র ক্রয়ে আগ্রহী হিমালয় এনার্জি হচ্ছে চায়না ঝেনহুয়া অয়েলের ও হংকংয়ের সিএনআইসি করপোরেশন লিমিটেড কনসোর্টিয়ামের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। চায়না ঝেনহুয়া অয়েল কোম্পানি লিমিটেড চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। ঝেনহুয়া শেভরনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থলভাগে বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা করছে শেভরন। তিনটি ক্ষেত্রে তারা গ্যাস উত্তোলন করছে দৈনিক ৭২ কোটি ঘনফুট। উত্পাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি অনুযায়ী পুরো গ্যাসই তারা পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণে লোকসানের ফলে তারল্য সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় বাংলাদেশসহ কিছু দেশে নিজেদের ব্যবসা বিক্রির পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি।