বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ভারতের অনুপ্রবেশকালে ৪ রোহিঙ্গা মুসলিমকে পুশব্যাক করল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতকরণ করে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে গত ১৯ আগস্ট একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জারি করা ওই নির্দেশিকার পর এই প্রথম রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা হল। সম্প্রতি বিএসএফ’কেও দিল্লি থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করার জন্য। তারপরই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।বিএসএফ সূত্রে খবর, সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন ওই ৪ জন রোহিঙ্গা মুসলিম। কিন্তু তাদের অনুপ্রবেশের কোন সুযোগ না দিয়ে পুশব্যাক করে বিএসএফ।
রোহিঙ্গা সঙ্কট ইস্যুতে উত্তাল ভারতের জাতীয় রাজনীতি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অভিমত জাতীয় নিরপত্তার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যথেষ্ট বিপজ্জনক, তাদের সাথে লস্কর, আইএস’এর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের যোগ রয়েছে। এই আশঙ্কা প্রকাশ করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সেকথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে দেশটির বিরোধী দলগুলি। বিরোধিতা করেছে দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও (এনএইচআরসি)। এমনকি জাতিসংঘও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। যদিও নিজেদের অবস্থানে অনড় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
নাম না জানানোর শর্তে বিএসএফ’এর কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরে অাসাম ও ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে ১৭ জন রোহিঙ্গা মুসলিম ধরা পড়েছে। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে’। বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে এমন ৭৫টি জায়গা বিএসএফ চিহ্নিত করেছে বলেও জানা গেছে।
তবে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিএসএফ’এর ওই কর্মকর্তা জানান, ‘রোহিঙ্গাদের কথা বলার ধরন (ভাষা) ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকদের থেকে অনেকটাই আলাদা। তাদের বাচনভঙ্গি দেখে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করাটা মোটেও অসম্ভব নয়। তারা বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকা দিয়ে ত্রিপুরা সীমান্তের দিকে আসতে পারে’।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে। তবে গত আগস্টের শেষে নতুন করে সহিংসতা তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ২৫ আগস্ট থেকে এখনও পর্যন্ত ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতেও বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে খবর।
ভারত-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তের উভয় দিকেই ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’(এফএমআর)-এর অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পরই তা খতিয়ে দেখতে গত জুন মাসে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং একটি কমিটিও গঠন করেন। গত সপ্তাহেই সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেতে ওই সীমান্ত পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বিভাগের বিশেষ সচিব রিনা মিত্র এবং উত্তরপূর্ব ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব সত্যেন্দ্র গর্গ।