বৃষ্টি হবে, এমন লক্ষণ ছিল না। রাজধানীর বাসাবো থেকে রামকৃষ্ণ মঠে আসে ১০ বছরের যমজ ভাইবোন অমৃত আর আদৃতা। নয়টার দিকে রামকৃষ্ণ মঠের সামনে রিকশা থেকে নামতে গিয়ে ভিজে গেল তারা। কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। মা দুর্গার দর্শন আর অঞ্জলি দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাদের চোখেমুখে।
তাদের বাবা সুনীল মজুমদার বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে অঞ্জলি দিতে সকাল সকাল রওনা হয়েছেন দুটি রিকশা নিয়ে। পথে পড়েন বৃষ্টিতে।
বৃষ্টি হলেও গতকাল বুধবার মহাসপ্তমীতে সকাল থেকেই রাজধানীর প্রায় প্রতিটি পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। দুপুরের পর থেকে মণ্ডপগুলোতে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এ ছাড়া সারা দেশে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় মর্যাদায় উদ্যাপিত হয়েছে মহাসপ্তমী। নবপত্রিকা স্থাপনের মধ্য দিয়ে মহাশক্তি আনন্দময়ীর পূজা শুরু হয়। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে দেবীর পূজা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সেই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে ভক্তরা দেবীর পূজা করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহানগর কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ এবং পরে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ পরিদর্শন করেন। রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে এ দুটি পূজামণ্ডপ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
গতকাল বিভিন্ন পূজামণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যা আরতি অনুষ্ঠান হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোলাগিরি আশ্রম, শ্রীশ্রী শিবমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, ধানমন্ডি কলাবাগান মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, বাংলাবাজার পূজা কমিটি, নর্থব্রুক হল রোড, প্রতিদ্বন্দ্বী পূজামণ্ডপ, তাঁতীবাজার পূজা কমিটি, শঙ্ঘমিত্র শাঁখারীবাজার, পানিটোলা, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটি, হাজারীবাগ সুইপার কলোনি, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, আজিমপুর সর্বজনীন পূজামণ্ডপ, বনানী পূজামণ্ডপ ও গৌতম মন্দির।
আজ মহাষ্টমীতে কুমারী পূজা
আজ বৃহস্পতিবার মহাষ্টমীতে বেলা ১১টার দিকে রামকৃষ্ণ মঠে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস—এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী’ মায়ের পূজা। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হবে পুষ্পমাল্য। কুমারী পূজা শেষে ভক্তরা মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি দেবেন।
কুমারী পূজা কেন হয়—এ বিষয়ে রামকৃষ্ণ মঠের মহারাজ স্বামী গুরু সেবানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, সব নারী ভগবতীর একেকটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী হয়ে উঠবে পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারীর প্রতি।
১৯০১ সালে ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মঠে কুমারী পূজার মাধ্যমে এর প্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। এ ছাড়া নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে। শাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করা হয়।
কুমারী পূজা ছাড়া আজ মহাষ্টমীতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বেলা একটা থেকে সারা দিন ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদিদের মধ্যেও প্রসাদ বিতরণ করা হবে। অন্য মন্দির ও মণ্ডপগুলোতেও পূজা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে।