রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাব পড়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরেও। গত এক মাসে এই স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কমেছে প্রায় ৭০ ভাগ।
যে ৩০ ভাগ আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে তা বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময়ে শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।মিয়ানমানের মংডুর সঙ্গেই এ স্থলবন্দরের সিংহভাগ বাণিজ্য হয়ে থাকে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন তা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বন্দরটি বর্তমানে বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। পরিচালনায় রয়েছে ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেড। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফের এই স্থলবন্দর দিয়ে টুকটাক যা আমদানি-রপ্তানি চলছে, তা মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দরের সঙ্গেই হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এ বন্দরটি যে কোনো সময় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে যে ব্যয় হয়, তাও উঠে আসা সম্ভব নয়। গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে এই বন্দর দিয়ে যাতায়াত (ইমিগ্রেশন) কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় গত ২৪ আগস্ট থেকে আরাকান রাজ্যে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন। গত আগস্টে দেড় কোটি টাকার বেশি আমদানি শুল্ক আদায় হলেও চলতি মাসের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ৪৩ লাখ তিন হাজার ৪৬৮ টাকা। ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ২৫ আগস্টের পর মংডু থেকে যেসব পণ্য আমদানি করার কথা ছিল তা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। মংডু থেকে ২৪ আগস্টও ১৩টি ট্রলারভর্তি পণ্য আসে এই বন্দরে। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ওই ট্রলারগুলোও আর যায়নি। এখন আমাদের যতটুকু আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে তা আকিয়াব থেকে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু দীর্ঘমেয়াদি থাকলে আমদানি নির্ভর টেকনাফ বন্দরের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে হবে। কারণ, মিয়ানমার থেকে এই বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ৯৫ ভাগ পণ্যের মধ্যে রয়েছে, চাল, মাছ, শুঁটকি, কাঠ, গরু, আদা, রসুন, পিয়াজ, আচার, শুকনো বড়ই ও বাঁশ। অন্যদিকে এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের ৫ ভাগের যে রপ্তানি পণ্য রয়েছে তা হলো প্লাস্টিক পণ্য, তৈরি পোশাক, ঔষধ, সেমাই, লম্বা চুল প্রমুখ। আমদানি-রপ্তানি করা এসব পণ্যে শুল্ক হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ পায় ২৮ দশমিক ৯০ টাকা। কাস্টমস সূত্রে জানায়, ১৯৯৫ সালে এই বন্দরটি যাত্রা শুরু হয়। গত ২২ বছরে এই বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয় ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৯ মেট্রিকটন পণ্য। যার মূল্য ৪ হাজার ২৭ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ৭৪১ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় মাত্র ৭৫ হাজার ২৭৯ মেট্রিকটন পণ্য। যার মূল্য ১৯৫ কোটি ১২ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৮ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭৮ কোটি ২১ লাখ ১৩ হাজার। অবশ্য আমদানি-রপ্তানিতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ১ হাজার ৯১৯ কোটি ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তবে চলতি (২০১৭-২০১৮) অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ে ধস নামতে পারে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষ।
টেকনাফ স্থলবন্দরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রামেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, বন্দরকে স্বাভাবিক রাখতে চলমান পরিস্থিতি উন্নয়ন জরুরি। আশা করছি, এই সমস্যা দ্রুতই কেটে যাবে। বন্দর স্বাভাবিক থাকলে সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে।
টেকনাফ সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, আমার জানামতে রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে ৬০ ভাগ আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে। টেকনাফের সঙ্গে মংডু স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য এখন পুরোপুরিই বন্ধ। এই অচলাবস্থা কাটানো খুবই জরুরি।