মোঃ জাকারিয়া/ সামসুদ্দিন/ আলী আজগর খান পিরু/সোলায়মান সাব্বির, গাজীপুর অফিস: ২০১৩ সালের ৬ জুলাই নবগঠিত গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নান। আওয়ামীলীগকে হারিয়ে তিনি মেয়র পদটি দখল করেন। এবারের নির্বাচনে বিএনপি থেকে তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। তবে পুরো মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি মান্নান।
যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মেয়র এমএ মান্নানকে ঢাকার বারিধারার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর একে একে তার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় প্রায় ২৮ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি।
পরে ৩০টি মামলার সব কয়টিতে জামিন পান মেয়র মান্নান। এরপর আদালতের নির্দেশে গত ১৮ জুন ফের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি
অধ্যাপক এম এ মান্নান এর আগে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে গাজীপুর সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিএনপির একমাত্র প্রার্থী হিসেবে গাজীপুরে এমপি নির্বাচিত হন। সেবার তিনি খালেদা জিয়া সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এম এ মান্নান। দলের মনোনয়ন পান জাপা থেকে বিএপিতে যোগদানকারী টঙ্গীর শ্রমিক নেতা হাসান উদ্দিন সরকার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এম এ মান্নান ৯৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। হাসান সরকার পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ভোট। দলের ভোট ভাগ হয়ে যাবার কারনে বিএনপি হেরে যায়। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বিএনপিকে। ২০১৩ সালে নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নের আগে তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি হাসান সরকারের সাথে সমঝোতা করেন মান্নান। হাসান আলী সরকারকে এমপি পদে ছাড় দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। হাসান সরকারও মান্নানকে সমর্থন দেন। নব গঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এম এ মান্নান অনেকটা চমক সৃষ্টি করে জয় ছিনিয়ে নিয়ে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
গাজীপুরে বিএনপির জয় মানেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় আনার টার্নিং পয়েন্ট। দুরুহ কাজটি করে মান্নান একদিকে যেমন দলে তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন, তেমনি গাজীপুর বাসীর কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্য হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এম এ মান্নানের ওই জয়ের পেছনে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল ছাড়াও নিজের সততা কাজ করেছে। নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে সরকার মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ট্যাক্স ফাকি দেয়ার অভিযোগ তুলে ধরায় তা শাপে বর হয়েছে। আর সব চেয়ে বড় কথা মান্নান আরেকবার প্রমাণ করলেন নির্বাচনে জেতার জন্য বিএনপির জাতীয় পার্টির সমর্থনের প্রয়োজন হবে না।
বিএনপি মনে করছে আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হলে অধ্যাপক এম এ মান্নান আবার বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। তবে দলীয় কোন্দল না থাকলে জয় সহজ হবে বলে মনে করছে বিএনপি।