দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটা ড্র হয়েছে অনুমিতভাবেই। কিন্তু বেনোনির উইলোমুর পার্কে ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রিত একাদশের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন দিনের ম্যাচটা খেলে কী পেল বাংলাদেশ? ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু পচেফ্স্ট্রুম টেস্টের আগে ব্যাটিং-বোলিংয়ে নিজেদের কতটা ঝালিয়ে নিতে পারলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা?
ব্যাটিংয়ে একটু আফসোস
চোটে পড়ে তামিম ইকবাল মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন প্রথম দিনের সকালেই। ভালোভাবে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ তাই হয়নি দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাটসম্যানের। প্রথম ইনিংসে ৪৩ রান করা সৌম্য সরকারও চোটে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছেন সাব্বির রহমান। দুই ইনিংসেই ফিফটি পেয়েছেন তিনি। বলা যেতে পারে এই প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সাব্বিরের ব্যাটে ফেরা ছন্দই। তবে ইনিংস আরও লম্বা না করার অতৃপ্তি আছে সাব্বিরের, ‘দুই ইনিংসেই ফিফটি আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করবে। তবে অতি আত্মবিশ্বাসী হচ্ছি না। মনোযোগটা আরও বাড়াব। ফিফটি থেকে আরও বড় ইনিংস কীভাবে খেলা যায় সেই চেষ্টা করব।’
ব্যাটিং অনুশীলন খুব একটা খারাপ হয়নি মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ও ইমরুল কায়েসেরও। তবে মুমিনুল-ইমরুলের স্ট্রাইকরেট বলছে, দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন তাঁরা। মুমিনুল প্রথম ইনিংসে ৬৩ রান করেছেন ৭৩ বলে খেলে, পরের ইনিংসে ৩৮ বলে ৩৩ রান। ইমরুল দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি পেয়েছেন ৫৪ বলে ৫১ রান করে। দ্রুত রান তাঁরা তুলতেই পারেন। যেহেতু প্রস্তুতি ম্যাচ, উইকেটে লম্বা সময় থেকে নিজেদের আরও ভালোভাবে ঝালিয়ে নিতে পারতেন। তবুও সাব্বির-মুমিনুল-মুশফিক-ইমরুলদের ব্যাটিং অনুশীলনটা খারাপ হয়নি। কিন্তু খামতি থেকে গেছে বাকিদের। শ্রীলঙ্কায় কলম্বো টেস্টে বাদ পড়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ দিয়ে দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ করেছেন ০ ও ১৫। দুই ইনিংস মিলিয়ে লিটন দাসের রান মাত্র ২। ম্যাচ শেষে সাব্বির তাই বললেন, ‘কয়েকজন ব্যাটসম্যান ভালো খেলেছি। কিছু বাজে আউটও হয়েছি। প্রথম টেস্টে হয়তো এটা হবে না।’
পরীক্ষা দিতে হয়েছে বোলারদেরও
বাংলাদেশের বোলাররা বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন এক ইনিংসে বোলিং করার। মোট ৯১ ওভার বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ-তাসকিন-মিরাজরা। অলআউট করতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশকে। তবে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে দুর্দান্ত বোলিংই করেছেন মোস্তাফিজরা। লাঞ্চের খানিক পরই দক্ষিণ আফ্রিকা সিএসএ আমন্ত্রিত একাদশের স্কোর হয়ে গিয়েছিল ৫ উইকেটে ১১০। কিন্তু ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা পরে আর ধরে রাখতে পারনেনি তাঁরা। লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকেরা। দলটির ছয় থেকে নয় নম্বর ব্যাটসম্যানের সবাই পেরিয়েছেন ৪০ রান। বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার চাইলে শিক্ষা নিতে পারে সিএসএ আমন্ত্রিত একাদশের এই ব্যাটিং থেকে। ইনিংসে বাংলাদেশ দলের সফলতম বোলার শফিউল ইসলাম ৬১ রানে ২ উইকেট পেলেও ছিলেন বেশ খরুচে। ওভারে ৫-এর বেশি রান দিয়েছেন। তাসকিনও ওভারপিছু দিয়েছেন ৫ রান। মোস্তাফিজ, শুভাশিস রায়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম সে তুলনায় কিছুটা ভালো বোলিং করেছেন। প্রত্যেকেই পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।
ফিল্ডিংয়ে পুরোনো রোগ
বাজে ফিল্ডিং অনেক দিন ধরেই ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রায় প্রতিটি সিরিজ বা টুর্নামেন্টেই বাজে ফিল্ডিং দেখা যায়। গত অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও সেটি অব্যাহত ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমন্ত্রিত একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটাও বাদ যায়নি। এক ইনিংসেই ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে গোটা চারেক। সর্বশেষ চট্টগ্রাম টেস্টে জীবন পেয়ে পেয়ে ডেভিড ওয়ার্নার কী করেছিলেন, সেটি নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি বাংলাদেশ!
চোটাঘাত
বাউন্সি আর দ্রুতগতির উইকেটে বরাবরই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে চোটাঘাতে জর্জর ছিল বাংলাদেশ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযানের শুরুতেই দুঃসংবাদ। ঊরুর মাংসপেশিতে চোট পাওয়ায় তামিমকে বসে থেকে কাটাতে হয়েছে প্রস্তুতি ম্যাচের প্রায় তিনটা দিন। ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পাওয়া সৌম্যও ব্যাটিং করতে পারেননি দ্বিতীয় ইনিংসে। যদিও দলের ফিজিও আশ্বস্ত করেছেন, দুজনকেই পাওয়া যাবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। আসল লড়াইয়ে যাতে চোট হানা না দেয়, সেদিক দিয়ে সতর্কই থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
নিজেরা কতটা তৈরি, সেটি বোঝার দারুণ সুযোগ প্রস্তুতি ম্যাচ। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় আরও কতটা পথ হাঁটলে গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে! যে ভুল-ত্রুটিগুলো হয়েছে, সেগুলো শুধরে তাই টেস্টে ভালো করার কথাই বললেন সাব্বির, ‘এখানে প্রথম ম্যাচ, তার আগে অনুশীলন করেছি তিন দিন। সব মিলিয়ে আমরা ভালো খেলেছি। যে রকম ধারণা ছিল, তার চেয়ে ভালো উইকেট ছিল। আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। আবহাওয়া বাংলাদেশের মতোই। একটু ঠান্ডা আছে। যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি মানিয়ে নিতে। প্রথম টেস্টে ভালো কিছু হবে আশা করি।’